কিশোরগঞ্জ: জেলার ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে এবার ১৮৯তম ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে গত ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর এবার ঈদুল আযহার জামাতকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। চার স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হচ্ছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি থাকছে বিজিবিও।
ঈদ জামাতকে নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনা। আরো তিনদিন আগেই ঈদগাহ ময়দানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক হাজারেরও বেশি সদস্য ঈদগাহ মাঠকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করছে। পুরো এলাকায় বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ঈদগাহ ময়দানে স্থাপন করা হচ্ছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ওয়াচ টাওয়ার। শোলাকিয়া ঈদগাহ ও সংলগ্ন এলাকায় চালানো হচ্ছে তল্লাসি। তল্লাসির জন্য স্থাপন করা হচ্ছে আর্চওয়ে। এছাড়া নিছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
শান্তিপূর্ণভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মাঠের বাইরে, মাঠের ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম।
তিনি জানান, ঈদুল ফিতরের দিন জঙ্গি হামলাস্থল আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের ঈদগাহমুখী সড়ক বন্ধ করে রাখা হবে। এছাড়া ঈদগাহ মাঠের দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথ ছাড়া অন্যান্য সব প্রবেশপথ বন্ধ থাকবে। পাতলা জায়নামাজ ছাড়া ঈদগাহে কোন মুসল্লি ছাতা, ব্যাগ এবং মোটা জায়নামাজ নিয়ে ঢুকতে পারবেন না।
এদিকে পুলিশের পাশাপাশি ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তা রক্ষায় মোতায়েন করা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্য। পুলিশ ও র্যাবের সতর্ক প্রহরা ছাড়াও মাঠে থাকবে তিন প্লাটুন বিজিবি। সুষ্ঠুভাবে ঈদজামাত আদায়ের লক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ ফোর্স ও অন্যান্য বাহিনীকে আইনগত দিকনির্দেশনা দেয়াসহ ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য ঈদগাহ মাঠের বিভিন্ন পয়েন্ট ও এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
গৃহীত প্রস্তুতির বিবেচনায় এবার উৎসবমুখর পরিবেশে সুন্দর ও সুচারুভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস।
তিনি জানান, ঈদুল আযহার জামাতের জন্য শোলাকিয়া ঈদগাহে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বৃহত্তম এই ঈদগাহে সকাল ৯টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিহীন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতে দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ঈদের দিন বাংলাদেশ রেলওয়ে ২টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে।
১৩ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ঈদুল আযহার দিন ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ নামের ২টি বিশেষ ট্রেনের একটি সকাল ৬টায় ভৈরব বাজার থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে। জামাত শেষে ট্রেনটি বেলা ১২টায় পুনরায় ভৈরববাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। অপর ট্রেনটি ঈদের দিন সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছুবে। এ ট্রেনটিও জামাত শেষে বেলা ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
শোলাকিয়ার বৃহত্তম জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য প্রতিবারই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিগণ ছুটে আসেন। তবে কোরবানির ব্যস্ততার কারণে ঈদুল আযহার জামাতে ঈদুল ফিতরের তুলনায় মুসল্লির সংখ্যা অনেক কম হয়ে থাকে। এখানকার ঈদ জামাতে এ ধরনের অসংখ্য লোকের খোঁজ পাওয়া যায়, যারা দীর্ঘদিন যাবত শোলাকিয়ায় নিয়মিত নামাজ আদায় করে আসছেন। সাধারণ মানুষ ছাড়াও প্রতিবারই এ জামাতে বিপুল সংখ্যক বিদেশী মুসল্লি উপস্থিত থাকেন। দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণে ঈদ উৎসবের বিশ্বমৈত্রীর বাস্তব চিত্র দেখতে পাওয়া যায় এই ঈদ জামাতে। এবার এ মাঠে ঈদুল আযহার ১৮৯তম জামাত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
১৮২৮ সালে জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ মাঠের গোড়াপত্তন হয়। ওই বছর স্থানীয় সাহেব বাড়ির উর্দ্ধতন পুরুষ সৈয়দ আহমদ (র.) এর ইমামতিতে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সে ঈদের জামাতে মুসল্লির সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ। এই সোয়া লাখ থেকেই উচ্চারণ বিবর্তনে বর্তমানে ‘শোলাকিয়া’ নামকরণ হয়েছে।-পূর্বপশ্চিম
১২ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর