কিশোরগঞ্জ থেকে : জনপ্রতিনিধিরা সৎ হলে সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতি করার সাহস পাবে না। দেশের সার্বিক উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
তরুণরা যাতে বিভ্রান্ত হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের বিশেষ করে অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান রাষ্ট্রপতি।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় সরকারি কলেজের ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষির্কী উপলক্ষে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একশ্রেণীর বিভ্রান্ত তরুণ এমনকি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডে জড়িয়ে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করছে। এসব বিভ্রান্ত তরুণদের বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, তরুণরা যাতে এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছেন- যেখানে নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
শিক্ষার মান নিশ্চিত এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সময়োপযোগী শিক্ষা প্রদানের আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান বিশ্ব খুবই প্রতিযোগিতামূলক। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের সমৃদ্ধ করার এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী শহীদদের ভুলে না যাওয়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আহবান জানান।
রাষ্ট্রপতি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবকিছুর উপরে দেশের স্বার্থকে স্থান দেবে। সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকবে। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেদের বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডে যুক্ত রাখবে। জনপ্রতিনিধিরা সৎ হলে সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতি করার সাহস পাবে না। দেশের সার্বিক উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
আবদুল হামিদ আবেগাপ্লুত কন্ঠে তার শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘আমি এখানে বড় হয়েছি এবং আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাওরের জনগণের সঙ্গে কাটিয়েছি। বঙ্গভবনে থাকলেও আমি সবসময় হাওরের পরিবেশ অনুভব করি।’
হাওর অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বহু খাতে অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এখানকার উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে হাওর অঞ্চলে বড় আকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। তা সত্ত্বেও আমরা হাওরের উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।
আবদুল হামিদ বলেন, ভৌগোলিক পরিস্থিতির কারণে কিশোরগঞ্জের হাওর-বাওর হচ্ছে প্রান্তিক এলাকা। এখানকার জনগণকে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়। তিনি হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে যার যার ভূমিকা পালনের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সংসদ রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, মোহাম্মদ সুহরাব উদ্দিন ও মোহাম্মদ আফজাল হোসেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানও বক্তৃতা করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্প ও একটি স্থানীয় স্কুল পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
১৩ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস