হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) থেকে : কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ছয় বছর ধরে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে স্কুলছাত্রী ফাতেমাকে। মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে সে আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে। তার হতদরিদ্র পরিবার তাদের মেয়েকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে মানবিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।
সরেজমিন তথ্য সংগ্রহকালে স্থানীয় লোকজন ও ফাতেমার পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফাতেমা আক্তার ২০১১ সালে উপজেলার হোগলাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য শাখার এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু নির্বাচনী পরীক্ষায় ইংরেজি ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার কারণে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। ফাতেমার পরিবার সহায়সম্বল বিক্রি করে কিছু দিন চিকিৎসা করালেও উন্নত চিকিৎসার অভাবে বর্তমানে ফাতেমা পুরো মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। বাবা-মাসহ যে কাউকে সামনে পেলে সে দা নিয়ে কোপ দিতে আসে, যে জন্য ছয় বছর ধরে ফাতেমাকে শিকলবন্দী করে ঘরে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকেরা জানান, কোনো মানসিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে ফাতেমার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু হতদরিদ্র বাবা-মা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়ে সমাজের দানশীল ব্যক্তি ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।
ফাতেমা কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার জিনারি ইউনিয়নের চরকাটিহারী গ্রামের কালাশি বাড়ির দরিদ্র মুহিবুর রহমানের ছয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম। বড় ছেলে বাবুল সর্দারের (৩৫) তিন সন্তানের মধ্যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। দ্বিতীয় ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩২) কাজের সন্ধানে ঢাকায় গেলে মাইক্রোবাসের সাথে সড়ক দুর্ঘটনায় একটি চোখ হারিয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে কোনো রকম বেঁচে আছেন। এক মেয়ে সালমা আক্তারকে যৌতুকলোভী স্বামী আবার বিয়ে করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আরেক মেয়ে নাজমা আক্তার যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় তালাক পেয়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছে। সর্বশেষ ছোট ছেলে পাপ্পু (১৫) গড়বিশুদিয়া দাখিল মাদরাসায় নবম শ্রেণীতে পড়ে।
এ ব্যাপারে হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) আহছানিয়া মিশনের সাথে যোগাযোগ চলছে। মেয়েটিকে চিকিৎসা করে যদি ভালো করা যায় তাহলে পরে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া এদের পুরো পরিবারকে কিভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা যায় সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে পরামর্শ করা হবে।
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস