কিশোরগঞ্জ থেকে: কিশোরগঞ্জে একটা স্কুলে এসএসসি রেজাল্ট দেওয়ার দিন সব ছাত্র/ছাত্রীরা জাতীয় সংগীত গাইবার মতো সারি বেঁধে স্কুল মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল। আর স্যার-ম্যাডামরা ২য় তলায় দাঁড়িয়ে ছিল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার হাতে ছিল এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট…
ম্যাডাম রেজাল্টটা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন!
মনে হচ্ছিল হাজার বছরের সব কষ্ট উনার বুকের ভেতরে…স্বজন হারানোর বেদনার মত ছিল।
উনি কান্না জর্জরিত কণ্ঠে জানালেন উনার স্কুল থেকে এই বছর শুধু একটা মেয়েই A+ পেয়েছে, সে হলো শারমিন!
সে শধু A+ ই নয় পেয়েছে Golden A+!
যে আজকে স্কুলের এই সুনাম বয়ে এনেছে, সেই হতভাগি আর এই দুনিয়াতে নেই!
স্কুল বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই জানতে পারেনি। মেয়েটি গত ১লা মে গঞ্জ থেকে অটো দিয়ে বাসায় আসার পথে রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।
কথাগুলো বলার সময় মনে হচ্ছিল, মেয়েটি উনার ছাত্রী নয়, যেন নিজের মেয়ের মৃত্যুর কথা বলছেন।
দেখলাম সারি বেঁধে দাঁড়ানো প্রতিটা ছেলে মেয়ের চোখ ভিজে গেলো, গাল বেয়ে পানি পরতে লাগলো, অনেকে দাঁড়ানো থেকে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে ! সবাই হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।
নিজেরা A+ পায় নাই, সেই দুঃখে নয়, স্কুলের সব চেয়ে বড় সম্পদটাই হারিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে ফেলেছে নিজের সাথের বন্ধুকে, সহপাঠিকে…খেলার সাথীকে…হারিয়ে ফেলেছে এক মেধাবী ছাত্রীকে।
যার বাবা কিনা গুদারা ঘাটের মাঝি! নাই বাড়িতে পড়ার টেবিল, নাই ভালো স্যারের কাছে পড়ার সামর্থ্য।
সেই ১ কি.মি. দূর থেকে হেঁটে আসতো স্কুলে।
যে কিনা মাঝে মধ্যে ফেরিঘাটে পানি বিক্রি করেও JSC তে A+ পেয়েছিল !
যেটা ছিল সেই নতুন স্কুলের প্রথম কারো A+ পাওয়া!
যার জন্য এই স্কুলের নামের পাশে বসাতে পেরেছিল, A+ সহ ১০০% পাশ সেই আজ দুনিয়াতে নেই !
JSC এর মত আজ SSC তেও কেউ A+ পায়নি, কিন্তু যে পেয়েছে সে আজ না ফেরার দেশে।
এই কথাগুলা যখন ম্যাডাম আবেগাপ্লুত হয়ে বলছিলেন, জানিনা কিভাবে যেন চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
কত কষ্টে সে লেখা পড়া করছে, ভাবা যায়?
সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে তার ও তার বাবার, আমাদেরই যদি এতটা খারাপ লাগে তাহলে ভেবে দেখুন তো শারমিনের বাবার কেমন লাগছে?
একজন মেধাবিনীকে এভাবে হারানোটা কতটা কষ্টের তার প্রকাশ চোখের জল সামান্যই দেখাতে পারে।
সোনায় মোড়ানো সন্তান জন্ম দিয়েছো বলে মা তোমায় সালাম…
ফেসবুক থেকে
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি