কিশোরগঞ্জ: সন্তানদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সমলা বেগম (৮০)। কয়েক দিন আগেও গোয়াল ঘরে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছিল তাকে। আজ সেই মাকে কোলে করে নতুন ঘরে প্রবেশ করছে একদিন তাকে অনাদরে ছুঁড়ে ফেলা সন্তানরা।
একটি ছোট্ট নতুন ঘর, নতুন আসবাদপত্র। মাথার ওপর ঘুরছে ফ্যান, জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ এলাকার বিশিষ্টজনেরা ফিতা কেটে উদ্বোধন করছেন সমলার সেই স্বপ্নের আবাস! এ সময় মাকে কোলে করে নতুন ঘরে প্রবেশ করেন ছেলে।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার দক্ষিণ সাহেদল গ্রামের নবী হোসেনের স্ত্রী সমলা বেগমের কাছে এমনটা স্বপ্ন ছাড়া আর কি-বা হতে পারে? তবে এমন স্বপ্নই বাস্তবায়ন করে দেখালেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
৪ ছেলে থাকার পরও বৃদ্ধ মাকে রাখা হচ্ছিল আলো-বাতাসহীন একটি গোয়াল ঘরে গরুর সঙ্গে। বিষয়টি জানার পর হোসেনপুর সার্কেলের এএসপি মো. সোনাহর আলী ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে অসহায় সেই মায়ের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন ঘর। শনিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘরটি বুঝিয়ে দেয়া হয় সমলার কাছে।
২ পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় এখন সন্তানদের কাছে তার কদর বেড়েছে। শেষ বয়সে আদর-আপ্যায়ন পেয়ে সমলা বেগমের মলিন মুখে হাসি ফুটেছে। ভুল বুঝতে পেরেছে সন্তানরাও। এমন মানবিক উদ্যোগ এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে-বলছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
শনিবার বিকেলে হোসেনপুর সার্কেলের এএসপি মো. সোনাহর আলী, হোসেনপুর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাইয়ুম খোকন, জেলা পরিষদের সদস্য মাসুদ আলমসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অবহেলিত মা সমলা বেগমকে দেখতে যান। এ সময় তার গায়ে ছিল নতুন শাড়ি। মুখে প্রশান্তির হাসি।
যে ছেলেরা এতদিন মাকে ফেলে রেখেছিলেন গোয়াল ঘরে, তারাই এখন মায়ের আশপাশে ঘুরঘুর করছেন। এক ছেলে মাকে কোলে করে হাজির হন বাড়িতে আসা বিশিষ্ট মেহমানদের সামনে। সমলা বেগম জানান, এখন ছেলেরা তাকে সম্মান করে, খোঁজখবর নেয়।
এএসপি (হোসেনপুর সার্কেল) মো. সোনাহর আলী জানান, গত দু’বছর ধরে গোয়ালঘরে নোংরা পরিবেশে সমলা বেগমকে রাখা হয়েছিল। তার ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ে থাকলেও কেউ খোঁজ নিত না। গত সপ্তাহে তার মেয়ের জামাই মানিক মিয়া হোসেনপুর থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান।
অভিযোগ শুনে তিনি ও হোসেনপুর থানার ওসি শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওই বৃদ্ধাকে দেখতে যান। অমানবিক অবস্থায় রাখা হয়েছে দেখে দুই ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে সমলা বেগমকে ছোট ছেলে নিজাম উদ্দিনের ঘরে তুলে দেন তারা। আর তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন ২য় ছেলে ইমান উদ্দিনের ছেলে ওমর ফারুক। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা সমলা বেগমকে একটি ঘর তৈরি করে দেয়ার আশ্বাস দেন।
খবর পেয়ে তাকে দেখতে যান হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহি উদ্দিন। তিনি এই বৃদ্ধা মাকে আর্থিক সহায়তা, বয়স্ক ভাতার কার্ড ও হুইল চেয়ার দেন। পুলিশ প্রশাসনের এমন উদ্যোগে চেতনা ফিরেছে সন্তানদেরও। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। দায়িত্ব নিয়েছেন মায়ের ভরণপোষণের। আর এতে হাসি ফুটেছে বৃদ্ধ মায়ের মুখে।
এমন উদ্যোগে খুশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। তারা বলছেন, এটি সবার জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। পৌর মেয়র আব্দুল কাইয়ুম খোকন জানান, দুই পুলিশ কর্মকর্তার এমন উদ্যোগে মানুষের মধ্যে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।