কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জুনাইল, মাইজহাটি ও বিশুহাটি গ্রাম। তিনটি গ্রামে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে তিন গ্রামের শতাধিক মানুষের। তবে কোরবানির মাংসের জন্য তিন গ্রামের কাউকে চিন্তা করতে হয় না। যারা কোরবানি দেন তারা তো বটেই, যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য নেই তাদের ঘরেও পৌঁছে দেয়া হয় মাংস। এজন্য তিন গ্রামের মানুষকে মাংসের জন্য অন্য কোথাও যেতে হয় না।
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে আসার নামই ঈদের বার্তা। আর কোরবানির উদ্দেশ্য হলো ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। বলতে গেলে প্রকৃত অর্থে কোরবানি দেন কিশোরগঞ্জের এই তিন গ্রামের মানুষ। কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য বুঝে বলেই কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের জুনাইল, মাইজহাটি ও বিশুহাটি গ্রামের পাঁচ হাজারের মানুষকে এক পরিবারের সদস্য মনে হয়। পরিবারের প্রতি সদস্যের মনে হয় ঈদ মানেই আনন্দ আর খুশি। দেখে মনে হয় একসঙ্গে কোরবানি দেন তিন গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ।
ত্যাগ, ভ্রাতৃত্ব আর ধর্মীয় রীতি মেনে সবাই মিলে একসঙ্গে, একই স্থানে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন বহু বছর ধ'রে। তিন গ্রামের মানুষের এমন ব্যতিক্রমী কোরবানির আয়োজন চলছে যুগ যুগ ধ'রে। একসঙ্গে পশু কোরবানি দেয়া এখানে তিন গ্রামের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে সামাজিক হৃদ্যতা বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি ভালো কাজে উৎসাহ পাচ্ছে এলাকাবাসী।
গ্রামবাসী জানায়, ধনী-গরিব সবার মাঝে ঈদের খুশি ভাগ করে নিতে একসঙ্গে পশু কোরবানি দিয়ে আসছে জুনাইল, মাইজহাটি ও বিশুহাটি গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ। ঈদের দিন কোরবানির পশু নিয়ে আসা হয় খোলা মাঠে। কোরবানির পর তালিকা করে মাংস পৌঁছে দেয়া হয় সবার ঘরে ঘরে। মাংসের জন্য কাউতে ঘুরতে হয় না কারও দ্বারে দ্বারে। সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির এই মেলবন্ধন চলছে যুগ যুগ ধ'রে। এ যেন প্রকৃত ঈদের এক টুকরো বাংলাদেশ।
পাকুন্দিয়ার ওসব গ্রাম ঘুরলে চোখে পড়বে ঈদের দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে সবার প্রস্তুতি থাকে ঈদ জামাতের। গোসলের আগে রান্না ঘরে নারীরা ব্যস্ত থাকেন নানা আয়োজন নিয়ে। এরপর গাঁয়ের পথ ধ'রে ঈদ জামাতে কাঁধ মেলান ছেলে-বুড়ো সবাই। নামাজের পর শুরু হয় কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা। স্বেচ্ছাশ্রমে সবাই হাত লাগান পশু জ'বাই আর মাংস ভা'গাভা'গির প্রক্রিয়ায়। দুপুর গড়িয়ে গেলেও শেষ হয় না তাদের কোরবানির মাংস ভা'গাভা'গির আয়োজন। সবার ঘরে কোরবানির মাংস পৌঁছা নিশ্চিত হলেই শেষ হয় তাদের দায়িত্ব।
বিশুহাটি গ্রামের বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, আমার দাদা ও বাবার সময় থেকে এই রীতি দেখে আসছি। তিন গ্রামের সবার মাঝে মাংস বিতরণ করা হয়। তবে কবে থেকে এই রীতি চালু হয়েছে তা আমার জানা নেই।
জুনাইল গ্রামের বৃদ্ধ (৬৫) আব্দুর রাশিদ বলেন, তিন গ্রামের মধ্যে যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে তাদের সবার পশু ঈদের দিন এক মাঠে আনা হয়। একসঙ্গে কোরবানি দেয়া হয় সব পশু। এরপর মাংস সমান তিন ভাগ করে একটি ভাগের অংশ পৌঁছে দেয়া হয় দরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি। বাকি দুই ভাগ নেন কোরবানিদাতারা। এমন সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য মেলবন্ধন পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা আরও গভীর করে। তিন যুগের বেশি সময় ধ'রে আমি এই রীতি দেখে আসছি।-জাগো নিউজ