বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫৬:৪৬

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত সকাল ৯ টায়

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত সকাল ৯ টায়

এ.এম. উবায়েদ রনি, কিশোরগঞ্জ থেকে : দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে।  ১৮৮তম ঈদুল আজহার জামাতের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।  ঈদের জামাত শুরু হবে সকাল ৯ টায়।  জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

ঈদ জামাতে অংশ নিতে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এবারো থাকছে শোলাকিয়া স্পেশাল নামের দু’টি ট্রেন সার্ভিস।  এরই মধ্যে মাঠের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে।  মাঠের দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ সব কাজই শেষ।

ঈদুল ফিতরের জামাতে শোলাকিয়ায় সাড়ে ৩ লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগম হয়েছিল বলে জানা গেছে।  এবারো শোলাকিয়া মাঠে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির ঢল নামবে বলে আশা করা হচ্ছে।  তবে কোরবানির আনুষ্ঠানিকতার কারণে মুসল্লির সংখ্যা কিছুটা কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

এদিকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। মাঠের বিভিন্ন প্রবেশ পথে থাকছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি)।  মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে থাকবে র‌্যাব-পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।  নামাজ শুরুর আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হবে।  মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
   
কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, মুসল্লিরা যাতে নিরাপদে মাঠে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।  যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি থাকবে সাদা পোশাকে পুলিশ টহল।

লাখ লাখ মুসল্লির কথা মাথায় রেখেই নিরাপত্তাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি।  মুসল্লিদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের আলাদা ব্যবস্থাও রয়েছে।

মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেন, মুসল্লিরা যাতে নিরাপদে নামাজ আদায় করতে পারে সেজন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।  ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে এবারো ঈদগাহ ময়দানে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সমাগম ঘটবে।
 
 কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ।  মসনদ-ঈ-আলা ঈশাখাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খানের উত্তরসুরী দেওয়ান মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সালে ৪.৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহকে ওয়াকফ করে দেন।  

এ মাঠের বর্তমান জমির পরিমাণ ৬.৬১ একর।  অজু করার পুকুর, মাঠ ও স্যানিটেশনের জায়গা মিলিয়ে মাঠের সর্বমোট পরিমাণ প্রায় ৭ একর।  মাঠে প্রবেশের মূল সড়কে একটি তোরণ ও একটি দোতলা মিম্বর রয়েছে।

শোলাকিয়া নামক স্থানটির পূর্বনাম ছিল রাজাবাড়িয়া।  কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব উত্তর কোনে নরসুন্দা নদীর অববাহিকায় শোলাকিয়া এলাকাটির অবস্থান। জনশ্রুতি আছে, শোলাকিয়া ঈদগাহে প্রথম বড় জামায়াতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছিলেন।  মোঘল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা।  উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া, সেখান থেকে বর্তমান নাম শোলাকিয়া।  

১৭৫০ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদের জামাত।  সে হিসাবে মাঠের বর্তমান বয়স ২৬২ বছর।  জানা যায়, ১৮২৮ ইং থেকে জঙ্গলবাড়ির জমিদার এ মাঠে নামাজ পড়তে শুরু করেন।  তখন থেকেই বড় জামাত শুরু হয়।  সে হিসাবে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে এবার ১৮৮তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে বন্দুকের তিনটি গুলি ফুটিয়ে সতর্ক করা হয়। এরপর তিন মিনিট আগে ২টি এবং নামাজ শুরুর এক মিনিট আগে ১টি গুলি ফুটিয়ে নামাজের নিয়ত করা হয়।  দীর্ঘদিন ধরেই এ রীতি চলে আসছে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে।
২৩ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে