কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের দুই মাস পরও গৃহবধূ ইয়াছমিন আক্তার (৩৫) ও তার চার সন্তানের কোনো খোঁজ মিলেনি। গত ২৬শে এপ্রিল সকালে সদরের দানাপাটুলি ইউনিয়নের গাগলাইল গ্রামের শ্বশুরালয় থেকে ইয়াছমিন আক্তার তার দুই মেয়ে মীম আক্তার (১৩) ও দুগ্ধপোষ্য ৬ মাস বয়সী নূপুর এবং দুই ছেলে ইয়াসিন (১০) ও অপূর্ব (৮)কে নিয়ে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে নিখোঁজ ইয়াছমিন আক্তারের বাবা তাড়াইল উপজেলার সুরঙ্গল গ্রামের মো. আবদুল আহাদ গত ২৭শে এপ্রিল কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় প্রথমে জিডি (নং-১৪০৪) এবং পরবর্তীতে ২৫শে মে কিশোরগঞ্জের ১নং আমলগ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামী শরীফ মিয়া রকি (৪৫) সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার সন্তানসহ গৃহবধূকে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ এনে মামলা করেন।
ওইদিনই আদালতের বিচারক কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও তাদের নিখোঁজ রহস্যের কোনো কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। নিখোঁজ ইয়াছমিন আক্তারের বাবা মো. আবদুল আহাদ জানান, গাগলাইল গ্রামের আবু বক্করের ছেলে শরীফ মিয়া রকির সঙ্গে ২০০২ সালের ১৮ই জুলাই পারিবারিকভাবে তার মেয়ে ইয়াছমিন আক্তারের বিয়ে হয়। রকি-ইয়াছমিন দম্পতির চার সন্তান মীম, ইয়াসিন, অপূর্ব ও নূপুরের মধ্যে মীম নানার বাড়িতে থেকে পুরুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। অন্যদিকে ইয়াছমিনের স্বামী শরীফ মিয়া রকি চট্টগ্রামের বন্দরটিলা এলাকায় রেডিমেট পোশাকের ব্যবসা করে। ৭/৮ বছর আগে সেখানে ঝুমুর নামে চট্টগ্রাম ইপিজেডের এক কর্মচারীকে সে গোপনে বিয়ে করে। বছরখানেক আগে দ্বিতীয় স্ত্রী ঝুমুরকে রকি গাগলাইল গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসলে বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হয়।
এ নিয়ে ইয়াছমিনের সঙ্গে রকির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে ছয় মাস আগে ইয়াছমিনের একটি কন্যা সন্তান হলে নিঃসন্তান ঝুমুর তাকে নিজের কাছে নিয়ে লালন-পালন করার কথা বললে ইয়াছমিন তা অগ্রাহ্য করে। এ নিয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ইয়াছমিনের কলহ লেগেই থাকতো। এ অবস্থায় গত ২৬শে এপ্রিল দুপুরে ইয়াছমিনের স্বামী রকি তার শ্বশুর আবদুল আহাদকে ফোন করে ইয়াছমিন ও তার চার সন্তানকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায়। খবর পেয়ে আবদুল আহাদ গাগলাইল গ্রামে ছুটে গেলে ইয়াছমিনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন সকালে ইয়াছমিন তার চার সন্তানকে নিয়ে বাড়ির বাইরে গিয়ে আর ফিরেনি বলে জানায়।
এ সময় তাদের নিখোঁজ সম্পর্কে ইয়াছমিনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন একেক সময় একেক রকম তথ্য দেয়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাদের কোনো খোঁজ না পেয়ে ২৭শে এপ্রিল কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় জিডি করেন আবদুল আহাদ। মেয়ে ও নাতি-নাতনীদের খোঁজে তিনি আত্মীয়স্বজনের বাড়িসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ভৈরব, আখাউড়া ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় হন্যে হয়ে ঘুরেন। কিন্তু ওই সময়ে ইয়াছমিনের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আশ্চর্য নির্লিপ্ততা আবদুল আহাদকে হতবাক করে। এ অবস্থায় ২৫শে মে কিশোরগঞ্জের ১নং আমলগ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামী শরীফ মিয়া রকি, শ্বশুর আবুবক্কর (৬৫), দেবর মুখলেছ (৩৫), সতীন ঝুমুর (২৫) ও শাশুড়ি রোকিয়া (৬০) এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার সন্তানসহ গৃহবধূকে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ এনে তিনি মামলা করেন।
আদালতের বিচারক কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশের পরও এখন পর্যন্ত পুলিশ নিখোঁজদের উদ্ধারে তেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে আবদুল আহাদ অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মোর্শেদ জামান জানান, চার সন্তানসহ গৃহবধূর এই নিখোঁজের ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। তদন্তে অনেক কিন্তুর উত্তর খোঁজা হচ্ছে। তবে অচিরেই এই রহস্যের জট খুলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।-এমজমিন
২৮ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ