বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই, ২০১৬, ০৭:০০:২৫

যেদিন কিশোরগঞ্জে ঘাঁটি গাড়ে জঙ্গিরা

যেদিন কিশোরগঞ্জে ঘাঁটি গাড়ে জঙ্গিরা

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ টার্গেট করে ২৭ রমজান কিশোরগঞ্জে ঘাঁটি গাড়ে হামলাকারীরা।  কয়েকবার তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে র‌্যাকি করে আসে।  সে মোতাবেক এ হামলার ছক আঁকে তারা।

পুলিশের হাতে আটক সন্দেহভাজন আহত এক জঙ্গি এসব তথ্য দিয়েছে।  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলাকারীর বাড়ি দিনাজপুর বলে জানায়।  ওই জঙ্গি বলেছে, ২৭ রোজার দিন তারা কিশোরগঞ্জে আসে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিশোরগঞ্জ পুলিশের একটি সূত্র এ কথা জানিয়েছে।  ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য কড়া নিরাপত্তায় ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছে। সুস্থ হওয়ার পর তাকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।  সে সময় অনেক তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে বলে দাবি ওই সূত্রের।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, হামলার পরে হামলাকারীরা আজিমউদ্দীন স্কুলের আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে যায়।  

তারা পুলিশের ওপর গুলিও চালায়। পুলিশও এ সময় গুলি করে। হামলার সময়ও গোলাগুলি হয়। এ সময় ছেলেটি গুলিতে নিহত হতে পারে।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল ৮ জন।  তাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।  তাদের কেউ কাউকে চেনেন বলে জানা গেছে।  হামলাকারীদের ধরতে পুলিশ দুটি বাসা ঘিরে রেখেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জঙ্গিরা গোলাগুলি করতে করতে শোলাকিয়া এলাকার একটি বাসায় ঢুকে পড়ে।  সেখান থেকে তারা পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ করে।  এ বাড়ির মালিক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নান ভূঁইয়া বাবুল।  তাকে জিজ্ঞাবাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

আটক তিন হামলাকারীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  দুর্বৃত্তের বোমা হামলার ঘটনাস্থলের আশপাশে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

হামলাকারীরা লুকিয়ে রয়েছে এমন সন্দেহে ঘটনাস্থলের কাছে সন্দেহভাজন দুটি বাসা পুলিশ চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে।  কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সায়েম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এ ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে শোলাকিয়া ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস।

তবে বোমা হামলার আতঙ্ক মুসল্লিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই প্রাণ ভয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান।  এ ঘটনায় ঈদের নামাজে ইমামতি করতে আসতে পারেননি শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।  সকাল ৯টার দিকে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে ইমামতি করতে স্থানীয় সার্কিট হাউসে পৌঁছেন আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ।  

ঈদগাহে যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিলে তার কাছে বোমা হামলার খবর আসে।  এ কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।

তার অনুপস্থিতিতে পাঁচ মিনিট পর বড় বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা সোয়াইব আবদুর রউফ নামাজ পড়ান।  দশ মিনিটের মধ্যে নামাজ-খুতবা ও দোয়া শেষ করেন তিনি।

শোলাকিয়া ঈদগাহের একশ' গজ পূর্বে আজিমুদ্দির উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় হামলাকারীদের বোমা হামলা ও পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে একজন হামলাকারী রয়েছেন। গুলিতে ঝর্ণা রানী ভৌমিক (৩২) নামে স্থানীয় এক নারীও নিহত হন।

নিহত দুই পুলিশ কনস্টেবল হলেন জহুরুল ইসলাম (৩২) ও আনসারুল হক(৪০)।

এ ঘটনায় আরো ছয় পুলিশ সদস্যসহ ১১ জন আহত হয়েছেন।  আহত ছয় পুলিশকে প্রথমে ময়মনসিংহ পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে ৩ হামলাকারীকে আটক করেছে পুলিশ।  তাদের মধ্যে একজন আহত।  তার নাম আবু মুক্তাদিন।  তার বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে।  অপর হামলাকারীর নাম জাহিদুল হক।  তার বাড়ি কিশোরগঞ্জে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রস্তুতিকালে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র, বন্দুক ও বোমা নিয়ে পুলিশ চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের পাশে বোমা হামলাকারীরা সবাই যুবক বয়সী।  সাত থেকে আটজনের একটি দল এ বোমা হামলা চালিয়েছে বলেও পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ জানায়, হামলাকারীদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তাদের প্রত্যেকের পরনে পাঞ্জাবি ও পায়জামা।  মুসল্লিদের সঙ্গে মিশে তারা পুলিশের কাছাকাছি চলে আসে এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই অতর্কিতে তারা বোমা নিক্ষেপ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা অসম্ভব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পুলিশের ওপর হামলা করে। তারা বোমা নিক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে চাপাতি দিয়ে পুলিশের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তারা পুলিশ সদস্যদের জখম করে।  পুলিশ গুলি চালালে তারাও দ্রুততার সঙ্গে পাল্টা গুলি ছোড়ে।

এদিকে নিহত হামলাকারীর পরনে রয়েছে হালকা  নীল পাঞ্জাবি ও পায়জামা।  আটক এক সন্দেহভাজন হামলাকারীর পরনে লাল রঙের পাঞ্জাবি।  এ যুবকের মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রয়েছে।

পুলিশ জানায়, আহত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে আবু মুকাদ্দিন, মামুন ও আহসানুল্লাহ নামে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তবে নিহত সন্দেহভাজনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

হাসপাতালে ভর্তি হামলাকারী মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির ছাত্র বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।  সে জানিয়েছে, হামলায় তারা পাঁচজন অংশ নিয়েছিল। তবে তারা কেউ কাউকে চেনে না বলে জানায়।

অধ্যাপক শরীফ আহমেদ সাদী আহতদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে এই হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত করেন।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান বলেছেন, তদন্ত শেষ না করে বিস্তারিত বলা সম্ভব হচ্ছে না।  পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গিরা রিভলবার, বোমা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

জঙ্গিরা আকস্মিকভাবে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।  তাদের নিবৃত্ত করতে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে।  দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়।

৭ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ ঈদগাহের প্রবেশমুখে তল্লাশির সময় এ বর্বর হামলার ঘটনা ঘটে।  এ ঘটনায় অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ৬ পুলিশ সদস্য।  গুরুতর অবস্থায় তাদের হেলিকপ্টার করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

পরে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলি হয়।  সে সময় সন্দেহভাজন এক হামলাকারী নিহত হন বলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

ঈদের সকালে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনায় শোলাকিয়া মাঠের জামাতে অংশ নিতে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদ জামাতে অংশ নিতে অনেকেই আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে মাঠে আসছিলেন।  এ সময় স্কুল ফটকের কাছে বসানো পুলিশ চেকপোস্ট লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।

শোলাকিয়া মাঠ থেকেও ওই শব্দ পাওয়া যায়।  মাঠে যাওয়ার পথে সামনে বোমা বিস্ফোরণ এবং মানুষের ছোটাছুটিতে অনেকেই বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।  হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল বলেও জানান স্থানীয়রা।

প্রাথমিক ধাক্কা সামলে পুলিশ হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করলে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়।  এ সময় পুলিশের গুলিতে অজ্ঞাতপরিচয় এক সন্দেহভাজন নিহত হন।  পরে বিজিবি ও র‌্যাবের একটি দল পুলিশের সঙ্গে অভিযানে যোগ দেয়।

১ জুলাই গুলশানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৮ জন নিহত ও অনেকে আহত হন।  এবার ঈদের প্রধান জামাতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়।  এর মধ্যেও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতে বোম হামলার ঘটনা ঘটলো।

কিশোরগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র‌্যাব কাজ করছে।
৭ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে