শুক্রবার, ০৮ জুলাই, ২০১৬, ০২:৩৫:২৫

‘যেন যুদ্ধ চলছে, প্রাণ বাঁচাতে আমরা সবাই মেঝেতে শুয়ে পড়েছিলাম’

‘যেন যুদ্ধ চলছে, প্রাণ বাঁচাতে আমরা সবাই মেঝেতে শুয়ে পড়েছিলাম’

গোলাম মর্তুজা : ‌‘যেন যুদ্ধ চলছে। মাঝেমধ্যে ঘরের বাইরের দেয়ালে গুলি লাগছে আর ভেতরের দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে। একটা গুলি লেগেছে ঘরের ভেতরের দেয়ালেও। ভয় পাচ্ছিলাম দেয়াল ফুটো হয়ে যায় নাকি। প্রাণ বাঁচাতে আমরা সবাই মেঝেতে শুয়ে পড়েছিলাম। পুলিশের পাঁচজন সদস্যও বাড়িতে ঢুকে পড়ে আমাদের সঙ্গে মেঝেতে শুয়ে থাকে। পরে এই পুলিশরাই আবার ফিরে এসে বাবুল মামাকে (গৃহকর্তা আবদুল হান্নান বাবুল) ধরে নিয়ে যায়।’

গতকাল বৃহস্পতিবারের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এভাবেই বলছিলেন আবদুল হান্নানের ভাগনি পারুল আক্তার। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অনতিদূরে সবুজবাগ মহল্লায় আবদুল হান্নানের বাড়ি। সবুজবাগ মহল্লার অন্য বাসিন্দারাও নিজেদের বাড়ির ভেতরে শুয়ে ছিলেন। তবু শেষ রক্ষা হয়নি; বাবুলের পাশের একটি বাড়ির গৃহকর্ত্রী ঝর্ণা রানী ভৌমিক নিজের শোয়ার ঘরের ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

আবদুল হান্নান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আবদুল হান্নানের বাড়ির বাইরের সীমানাদেয়াল, বারান্দার দেয়াল, এমনকি বাসার ভেতরের ড্রয়িংরুমের দেয়ালেও গুলির অনেকগুলো চিহ্ন। বারান্দার দেয়ালের বাইরের দিক থেকে গুলি লেগে ভেতরে ড্রয়িংরুমের দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে। গুলি লেগেছে বারান্দার সামনের গাছগুলোতেও।

পারুল আক্তার বলেন, ঘটনার সময় আবদুল হান্নান ও পাঁচজন নারী সদস্য বাসায় ছিলেন। অন্যরা শোলাকিয়ায় নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। পাশের আরেকটি মসজিদ থেকে ঈদের নামাজ পড়ে এসে আবদুল হান্নান বিছানায় শুয়ে ছিলেন। এমন সময়ই প্রথমে কিছু বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এরপর শুরু হয়ে যায় গোলাগুলি। এর মধ্যেই বাড়ির পেছন দিয়ে পাঁচ পুলিশ সদস্য বাসায় ঢুকে পড়েন।

পুলিশ সদস্যরা বলছিলেন, তাঁদের গুলি শেষ হয়ে গেছে। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে লাল গেঞ্জি পরা এক তরুণও বাসায় ঢুকে পড়েন। বাসায় ঢুকে পুলিশ সদস্যরাই ভেতরের ঘরের মেঝেতে সবাইকে শুয়ে পড়তে বলেন। বাইরে থেকে গোলাগুলির শব্দ আসছিল। পুলিশের কথা শুনে সবাই ভেতরের ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়ে।

পারুল বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যুদ্ধ হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, ভেতরের দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে। আমি ভয় পেয়েছিলাম, যদি কেউ বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়। আবার দেয়াল ফুটো হয়ে যায় নাকি তারও ভয় করছিল। আধা ঘণ্টার বেশি এভাবে চলে। এরপরে গোলাগুলি থামলে পুলিশ সদস্যরা চলে যান।’

পারুল আরও বলেন, ‘কিছুক্ষণ পরেই তাঁরা আবার হেলমেট রেখে গেছেন বলে ফিরে আসেন। তখন তাঁরা ওই লাল গেঞ্জি পরা তরুণ ও আবদুল হান্নানকে ধরে নিয়ে যান।’

বাড়ির সদস্যরা বলেন, লাল গেঞ্জি পরা ওই তরুণকে তাঁরা প্রথমে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চাননি। পরে ওই তরুণ বলেন, তিনি একটি কলেজে পড়েন। এখান দিয়ে যাওয়ার সময় বিপদে পড়েছেন। আর পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এসেছেন বলে তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই পুলিশ সদস্যরাই এসে ওই তরুণসহ আবদুল হান্নানকে ধরে নিয়ে যান।

গোলাগুলির সময় ঘরের ভেতরেই গুলি লেগে নিহত হন পাশের ভৌমিক বাড়ির গৃহকর্ত্রী ঝর্ণা রানী ভৌমিক। ঝর্ণার দেবর উপেন্দ্রনাথ ভৌমিক বলেন, ‘গোলাগুলির পরে আমরা সবাই মেঝেতে শুইয়া পড়ি। ঝর্ণা গেল পাশের ঘরে লুঙ্গি আনতে। যাইতে না-যাইতেই মাথায় গুলিডা লাগল। হেইখানেই শ্যাষ।’ -প্রথম আলো
০৮ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে