বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:৫৪:৪৩

জাহিদুলের পাসপোর্টের খোঁজে পুলিশ

জাহিদুলের পাসপোর্টের খোঁজে পুলিশ

আশরাফুল ইসলাম: ইংরেজি, আরবি, কোরিয়ান ও জাপানিসহ বেশ কয়েকটি ভাষা জানতো শোলাকিয়ার ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া জাহিদুল হক তানিম। সে বিভিন্ন সময় দেশের বাইরে গেছে। তার পাসপোর্টে বেশ কয়েকটি দেশের ভিসাও লাগানো রয়েছে। রিমান্ডে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদুল এমন তথ্য দেয়ার পর পাসপোর্টটি উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ। পাসপোর্টের খোঁজে জাহিদুলদের বাসায় তল্লাশিও চালানো হয়েছে। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহিদুল কখনও দেশের বাইরে গিয়েছে কিনা সেটি তারা এখনও নিশ্চিত নন। তার পাসপোর্ট পাওয়া গেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

তবে জাহিদুলের ভাই আকাইদ বলছেন, জাহিদুল ঢাকার বাইরে অন্য কোথাও যায়নি। বন্ধুদের সঙ্গে একবার কক্সবাজার গিয়েছিল। এদিকে জাহিদুল হক তানিমের ফেসবুকেও ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের উগ্রবাদীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জাহিদুলের জড়িত হওয়ার ব্যাপারে সেসবেরও যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তার নিজ নামের এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির টাইমলাইনে ২০১৩ সালের ৩রা আগস্টের পর আর কোনো পোস্ট দেখা যায়নি।

পরবর্তীতে সে কোনো ছদ্মনাম ব্যবহার করে ফেসবুকে সক্রিয় ছিল কিনা তারও খোঁজ করা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আট ভাইবোনের মধ্যে জাহিদুল হক তানিম সবার ছোট। সে ২০০৬ সালে শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার বাসাসংলগ্ন আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। ২০০৮ সালে শহরের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকার তিতুমীর কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়। কিন্তু অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার সময় সে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ওই সময় সে এডমিট কার্ড হারিয়ে ফেলায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বলে পরিবারকে জানায়।

জাহিদুল হক তানিমের বড় ভাই আকাইদ জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে রাজধানীর পল্টন এলাকার ফুজি ইন্টারন্যাশনালে জাহিদুল চাকরি নেয়। সেখানে চাকরি করার সময় সে জাপানিসহ দু’য়েকটি বিদেশি ভাষা শিখে। বছরখানেক চাকরি করার পর মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে তার চাকরি চলে যায়। আকাইদ আরো জানান, ছোট বেলা থেকেই জাহিদুল ধার্মিক প্রকৃতির ছিল। নিয়মিত নামাজ পড়তো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নামাজ আদায়ে সে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এদিকে জাহিদুল হক তানিমের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে দুটি স্মার্টফোন এবং কিছু সিডি ও ডিস্ক জব্দ করেছে পুলিশ। জব্দ করা দুটি স্মার্ট ফোনের মধ্যে একটি জাহিদুল হক তানিমের ব্যবহৃত পুরনো স্মার্টফোন এবং অন্যটি তার ভাই আকাইদের ব্যবহৃত স্মার্টফোন বলে জানিয়েছেন জাহিদুলের বাবা মো. আবদুস সাত্তার চান মিয়া।

তিনি জানান, সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ এসে এই দুটি স্মার্টফোন নিয়ে যায়। এ সময় তারা জানায়, তদন্তের কাজে এগুলো প্রয়োজন। পরে এসে তারা ফেরত দিয়ে যাবেন। এছাড়া, বুধবার দুপুরে পুনরায় এসে বাসা তল্লাশি করে পুলিশ। এ সময় বাসায় পুরুষ কেউ ছিলো না। তার ছেলে আকাইদের স্ত্রী মুক্তা আক্তার ও দাদি শাশুড়ি হাওয়াল নেছা ছিলেন। ঘরের ওয়্যারড্রোব ও অন্যান্য জিনিসপত্রে তল্লাশি চালিয়ে কিছু সিডি ও ডিস্ক নিয়ে যায়। এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা অনানুষ্ঠানিকভাবে জাহিদুল জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে জানালেও কি ধরনের তথ্য দিচ্ছে সে সম্পর্কে তেমন কিছু বলছেন না।

তবে তারা বলছেন, জাহিদুল হক তানিম মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তার দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এরপরই তারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শোলাকিয়া মিশনে জাহিদুল হক তানিম অংশ নিয়েছে। পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের সময় সে ঘটনাস্থলের একটি বাসায় ঢুকে পড়ে। সেখানে পোশাক বদল করে সে আত্মগোপনেরও চেষ্টা করে। সে সময়েই তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় বাসার ভেতর থেকে ফ্রিজের পেছনে লুকিয়ে রাখা জাহিদুল হক তানিমের ব্যবহৃত গাঢ় সবুজ রংয়ের পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা, রক্তমাখা টুপি ও পাগড়ি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাহিদুল হক তানিম শোলাকিয়ায় হামলার পরিকল্পনায় কবে থেকে যুক্ত হয়েছিল, সেটি তদন্ত দলের পক্ষ থেকে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। হামলায় তার কি ভূমিকা ছিল সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া সে অন্য কোথাও কোনো সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল কিনা, সে বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে।


গত ৭ই জুলাই ঈদের দিন জঙ্গিদের হামলাস্থলের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী পাকুন্দিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বাদী হয়ে ১০ই জুলাই সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ (সংশোধনী) ৬(২)/৮/৯/১০//১২/১৩ ধারায় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা (নং ১৪) দায়ের করেন। মামলায় বন্দুকযুদ্ধের পর র‌্যাবের হাতে আটক দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার শরীফুল ইসলামকে প্রধান ও জাহিদুল হক তানিমকে দ্বিতীয় আসামি করে আরো কিছু অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীকে আসামি করা হয়।

সেদিন বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলেই ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার আবীর রহমান (২৩) নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুটি জাপানি পিস্তল, একটি পরিত্যক্ত অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, দুটি চাপাতি ও দুটি চাইনিজ কুড়ালসহ কিছু কাপড়, গামছা ও টুপি উদ্ধার করা হয়। এদিন চেকপোস্টে জঙ্গিদের চাপাতির হামলায় দুই পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম তপু ও আনসারুল হক এবং সন্ত্রাসীদের গুলিতে স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক নিজ বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

এই মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জাহিদুল হক তানিমকে রোববার রাতে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মোর্শেদ জামানসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে বন্দুকযুদ্ধের এক পর্যায়ে ওই এলাকা থেকে আটক শোলাকিয়া গোহাটা এলাকার সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার মোশারফ হোসেনের ছেলে মামুনুর রশিদ (২৭), শহরতলির বয়লা এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে সানাউল্লাহ (৩০), বাজিতপুরের পিরিজপুর এলাকার কাঠুরিয়া সামছুদ্দিনের ছেলে ভৈরব কলেজের ছাত্র সোহেল (১৯), ভৈরবের পঞ্চবটি এলাকার মৃত আবদুল জলিলের ছেলে তারা মিয়া ও শহরের তারাপাশা এলাকার মৃত মাহবুবুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম হাসিবকে অন্য মামলায় সোমবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক, কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক নিহত হওয়ায় বুধবার বিকালে শহরের কালীবাড়ী প্রাঙ্গণে এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা এই শোকসভার আয়োজন করে। সংগঠনের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ক্ষিতিশ দেবনাথের সভাপতিত্বে শোকসভায় জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাজাহান, জেলা ন্যাপ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক রতন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মো. আসাদ উল্লাহ, সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ ভৌমিক প্রমুখ বক্তৃতা করেন।-এমজমিন

১৪ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে