উবায়েদ রনি, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: শহীদ সিরাজুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ ১৯৫২ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেণ।। বাবা মরহুম মকতুল হোসেন, মাতা গফুরুন্নেছা।
গুরুদয়াল সরকারী কলেজে স্নাতক ১ম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ১৯ বছর বয়সে যুদ্ধে গমন।
ভারতের আসামে ইকোয়ান কেম্পে প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীতে ৫নং সেক্টরের অধীনে সাব সেক্টও কমান্ডার ছিলেন। সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাকায় বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেণ সিরাজুল ইসলাম।
১৯৭১ সালের ৮ আগষ্ঠ, সুনামগঞ্জের সাচনা হানাদার মুক্ত করতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলাকালীন একটি বুলেট সিরাজের কপালে বিদ্ধ হলে তিনি গুরুতর আহত হন। মিত্রবাহীনীর হেলিকপ্টারে করে ভারতে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেণ। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে টেকেরঘাটের খাসিয়া পাহারের পাদদেশে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়। আজ ৮ আগষ্ঠ শহীদ সিরাজুল ইসলাম বীর প্রতীকের মৃত্যুবার্ষিকী।
কালজয়ী সেই চিঠি
৩০.০৭.১৯৭১
প্রিয় আব্বাজান
আমার সালাম নিবেন। খোদার কৃপায় ভালই আছি। বাড়ির সকলকে আমার শ্রেণীমত সালাম ও ¯েœহ রহিল। আলীরাজ, রওশন, মাতাব, রনু, ইব্রাহিম, ফুল মিয়া, সকলেই একত্রে আছি। দেশের জন্য আমরা সকলেই জান কোরবান করিয়াছি। আমার জন্য ও দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য দোয়া করবেন। আমি জীবনকে তুচ্ছ মনে করি, কারণ দেশ স্বাধীন না হইলে জীবনের কোন মূল্য থাকিবে না। তাই যুদ্ধই জীবনের পাথেয় হিসেবে নিলাম। আমার অনুপস্থিতে মাকে কষ্ট দিলে আপনাদেরকে ক্ষমা করিব না। পাগলের সব জ্বালা সহ্য করিতে হইবে। চাচা, মামাদের ও বড় ভাইয়ের নিকট আমার সালাম। বড় ভাইকে চাকুরিতে যোগদান করিতে নিষেধ করিবেন। জীবনের চেয়ে চাকুরি বড় নয়। দাদুকে দোয়া করিতে বলিবেন। মৃত্যুর মূখে আছি। যে কোন সময় মৃত্যু হইতে পারে এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। দোয়া করবেন মৃত্যু হইলেও দেশ যেন স্বাধীন হয়। তখন দেখিবেন লাখ লাখ ছেলে বাংলার বুকে পুত্র হারাকে বাবা বলে ডাকিবে। এই ডাকের অপেক্ষায় থাকুন। আমার জন্য চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার দুই মেয়েকে পুরুষের মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। তবেই আপনার সাধ মিটে যাবে। দেশবাসী স্বাধীন বাংলা কায়েমের জন্য দোয়া কর। মীর জাফরী করিওনা। কারণ মুক্তিফৌজ তোমাদের ক্ষমা করিবে না এবং বাংলায় তোমাদের জায়গা দিবে না। সালাম দেশবাসী সালাম।
ইতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম
৮ আগস্ট ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস