কুমিল্লা থেকে : অবশেষে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ভোট উৎসব আজ (বৃহস্পতিবার)। দৃষ্টি সবার আজ কুমিল্লায়। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচন ঘিরে নগরজুড়েই চলছে উৎসবের আমেজ। অপেক্ষায় ভোটাররা। এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রধান দুই দলের দুই প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা, না বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু— তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। তবে নগরপিতা যিনিই হোন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথাই বলছেন নগরবাসী। এটিকে দুই দলেরই মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। এদিকে সিটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাগমারায় এক বাড়িতে জঙ্গিদের অবস্থান সন্দেহে বাড়িটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘিরে রেখেছে। এ নিয়ে ওই এলাকার ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নতুন নির্বাচন কমিশনের অগ্নিপরীক্ষা আজ। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
এরই মধ্যে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশেষ নিরাপত্তায় ভোট কেন্দ্রে ব্যালটসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হয়েছে। প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। ভোট গ্রহণ ও ভোটারদের নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫ হাজার সদস্য। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে এসব বাহিনীকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসি। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে চার স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিজিবি-র্যাব-পুলিশের সদস্যরা। কেউ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিজয়ের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, ‘উন্নয়নের কথা ভেবে জনগণ জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হবে জেনে দলের নেতারা মিথ্যাচার শুরু করেছেন। বিএনপি-জামায়াতের মদদে জঙ্গিরা দেশজুড়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা ও নাশকতা চালাচ্ছে। মানুষ উন্নয়ন চায়, শান্তি চায়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চায় না। তাই আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সর্বস্তরের মানুষ সৎ, যোগ্য প্রার্থী সীমাকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী (সাক্কু) অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। ভোট সুষ্ঠু হলে তিনি জয়ী হবেন। বিএনপির জনপ্রিয়তার প্রমাণ হবে। তবে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে। ’
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। ভোটারদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও থাকছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। ভোটাধিকার প্রয়োগে কোনো ভোটারকে কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার পথে কেউ বাধা দিলে বা ভয়ভীতি, শক্তি প্রদর্শন করলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোট উপলক্ষে এই সিটিতে আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মেয়র পদে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এরা হলেন আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা, বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু, জেএসডির শিরিন আকতার ও স্বতন্ত্র মেজর মামুনুর রশিদ (অব.)। এ ছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪০ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
শেষ মুহূর্তে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগও উঠেছে কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে। বিত্তশালী প্রার্থীরা ভোট কিনতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছেন। নগদ অর্থ ছাড়াও ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, টিশার্ট, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী। বিডি প্রতিদিন।
৩০ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস