কুমিল্লা : বিয়ের সাজগোজে কনে, কিন্তু বিয়ে না করেই পালিয়েছে বর। ঘটনাটি ঘটেছে ২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামে।
জানা গেছে, আজ দুপুরে ৪টি মাইক্রোবাস যোগে প্রায় ৬০ জন বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে হাজির হন রাব্বি (২৫)। প্যান্ডেলে চলছিল বরযাত্রীসহ অতিথিদের আপ্যায়ন।
এক পাশে স্টেজে মাথায় পাগড়ি, হাতে রুমাল নিয়ে লাজুক লাজুক চোখে বসেছিলেন কাঠমিস্ত্রির সহকারী বর রাব্বি। ঘরের কোনে খাটের ওপর কাপড় প্যাঁচিয়ে বসেছিলেন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর স্কুলছাত্রী লিজা।
প্রায় ২৫-২৬ বছর বয়সী এক তরুণী কনেকে সাজানোর জন্য এলেও লিজা তাতে আপত্তি জানায়। বলে আর একটু পরে! এরপর চলে সাজগোজ।
এদিকে বাল্যবিয়ের খবর সংগ্রহে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ছুটে যান চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের ওই বিয়ে বাড়িতে। ১২ বছর বয়সী লিজার বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেখে সংবাদ দেয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন চৌধুরীকে।
মুহূর্তের মধ্যে খবর চলে যায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম প্রধানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে। শুরু হয় এদিক ওদিক ছুটোছুটি। খোলা শুরু হয় বিয়ে বাড়ির তোড়ন, প্যান্ডেল।
বিকেল ৪টার দিকে ইউএনও সুমন চৌধুরীর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়। ততক্ষণে বর রাব্বি উধাও। কনে লিজাকেও অন্য ঘরে লুকিয়ে রাখা হয়।
ইউএনও সুমন চৌধুরী স্থানীয় চেয়ারম্যান শাহ্ সেলিম প্রধানকে সাথে নিয়ে কনে লিজাকে উদ্ধার করেন। ডেকে আনা হয় লিজার স্কুল পানিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কনের পিতা ও বরের পিতাকে। বন্ধ করে দেয়া হয় বাল্যবিয়ে।
বাল্যবিয়ের আয়োজন করার অপরাধে কনের পিতা মোজাম্মেল হক মুন্সি ও বরের পিতা জাহাঙ্গীর আলমকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রধানশিক্ষককে লিজার দেখাশোনা করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। লেখাপাড়ার সব দায়িত্ব নেন ইউএনও নিজেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী জানান, বর উধাও হলেও কনেকে উদ্ধার করেছি। বর-কনের পিতা বাল্যবিয়ে দেবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন। তাদের দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আজ থেকে লিজার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করব বলে জানান তিনি। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সহযোগিতা করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
২৮ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম