কুমিল্লা : পায়ে হেঁটে বিভিন্ন দেশ ঘুরে হজ্ব পালন শেষে এক বছর পর সোমবার রাত ১১টায় নিজ বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের শেয়ার বাতাবাড়িয়া এসে পৌঁছেন আলিফ মাহমুদ (২৫)।
আলিফ মাহমুদ ওই গ্রামের মরহুম আব্দুল মালেকের পুত্র। তার আগমণের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার ভোর থেকে বিভিন্ন এলাকার শত-শত উৎসুক জনতা তাকে এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় জমান।
মরহুম আব্দুল মালেকের ৩ ছেলে ও ১কন্যা সন্তানের মধ্যে আলিফ মাহমুদ সবার ছোট। আলিফ মাহমুদের বড় ভাই রেজাউর রহমান পূর্বাণী গ্রুপের এইচ.আর পদে কর্মরত, আরেক ভাই সজিব মাহমুদ একজন ব্যবসায়ী। তার পিতা আব্দুল মালেক একজন লেখক ছিলেন, তিনি ২০১১সালে মৃত্যুবরণ করেন।
আলিফ মাহমুদ পারিবারিক জীবনে অবিবাহিত হলেও অল্প সময়ের মধ্যে যুগল জীবনে পদার্পণ করবেন বলে জানান তিনি। আলিফ মাহমুদ ২০২৩ সালের ৮জুলাই নাঙ্গলকোটের শেয়ার বাতাবাড়িয়া গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে ১৩জুলাই ঢাকা পৌঁছান।
এরপর ধর্মমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ভিসা সংক্রান্ত কাজে প্রায় দেড় মাস রাজধানীতে অবস্থান শেষে ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে হাঁটা শুরু করে ১৯সেপ্টেম্বর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছেন।
ভারতে ৬৭টি দিন হাঁটার পর ২৫ নভেম্বর ভারতের ওয়াগাহ সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান পৌঁছেন। পাকিস্তান থেকে হাঁটে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বন্দর আব্বাস সীমান্ত দিয়ে ইরান পৌঁছেন। ইরান থেকে ২৭জানুয়ারী আরব আমীরাতে পৌঁছেন। আরব আমীরাতের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে আবুধাবীর শিলা সীমান্ত দিয়ে সৌদি আরব পৌঁছেন।
সর্বশেষ সৌদি আরবে ৪ মাস ১৪দিন থাকার পর ওমরাহ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ১৭ মে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় চলে যান। ইথিওপিয়া থেকে ২৩ মে পুনরায় পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব পৌঁছেন। এছাড়াও, আলিফ মাহমুদ ২০২২ সালে সাইকেল চালিয়ে ৪১দিনে বাংলাদেশের ৬৪জেলা ভ্রমণ করেন।
আলিফ মাহমুদ বলেন, ২০২৩ সালের ৮জুলাই আমি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে দীর্ঘ ৯মাসে পায়ে হেঁটে সৌদি আরব পৌঁছে পবিত্র হজ্ব পালন করে ২০২৪ সালের ৮জুলাই একবছর পর বাড়িতে এসে পৌঁছতে পেরেছি। এ দীর্ঘপথ যাত্রায় আমি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, আরব আমিরাত ও সৌদি আরব এই ৬টি দেশের প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেছি।
প্রতিদিন আমি ৪০-৫০ কিলোমিটার হেঁটেছি, এর মধ্যে আরব আমীরাতের দুবাই থেকে আবুধাবি পৌঁছাতে একদিনে স্বচ্ছ ৯০ কিলোমিটার হেঁটেছি। আমি হাঁটতে গিয়ে এসব দেশের কালচার আমি দেখেছি এবং তাদের সাথে মিশার সুযোগ পেয়েছি এবং শুধু মুসলিম নয় অন্যান্য ধর্মের লোকও আমাকে দেখতে এসেছে, আমি বিশ্বাস করি পবিত্র ভূমিতে গমনের জন্য আমার এ ত্যাগ দেখে নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও আমাদের ধর্মের প্রতি অন্যধর্মের লোকেরা অনুপ্রাণিত হয়েছে, এটাই আমার সব ছেয়ে বড় পাওয়া।
আমার ইচ্ছা আমি বিশ্বভ্রমণ করবো এবং আফ্রিকার দেশ গুলোসহ বিশ্বব্যাপী দ্বীনের দাওয়াত দিবো। এছাড়া আমি স্বপ্ন দেখি আমি আমার এলাকায় দরিদ্র ও পথ শিশুদের জন্য একটি স্কুল ও মাদ্রাসা এবং তাদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল স্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।