শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:২৩:৫৬

এখানেই পড়েছিল সেই মেধাবী তনুর মাথা থেঁতলানো লাশ

এখানেই পড়েছিল সেই মেধাবী তনুর মাথা থেঁতলানো লাশ

নিউজ ডেস্ক : কোনো এক সুন্দর সকালে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে সোহাগী জাহান তনু লিখেছিলেন, বৃক্ষ লতা গাছপালা/ সবুজ তরু ছায়া মেলা/ দুপুর বেলা গাছের ছায়া/ শীতের সকালে রোদের খেলা।  গাছগুলো দোলে সারাবেলা/ বাতাসের সাথে করে খেলা/ গাছের ডালে পাখি ডাকে/ সবুজ পাতার আড়াল থেকে/ পাখির ডাক ভালো লাগে/ শীতের এই সকালটাতে... শুভ সকাল।

হয়তো গাছপালা, ধানক্ষেত, পাখি কিংবা প্রকৃতি তার খুব প্রিয় ছিল।  তখনো কি তিনি জানতেন মানুষরূপী হায়েনারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেই সুবজের মাঝেই ফেলে যাবে! তার রক্তে রঞ্জিত হবে সুবজ গাছের ছায়া। ভালো লাগা পাখিরা ডাক ভুলে আতঙ্কে পাখা ঝাপটাবে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকারে।

‘Jahan Zara’ নামে তনুর ফেসবুক আইডি থেকে শুধু এই কবিতাই নয়, পল্লিকবি জসীম উদ্‌দীনের কবিতাও পাওয়া গেছে।  গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি পল্লিকবির একটি কবিতার কয়েকটি লাইন স্ট্যাটাসে লিখেছেন-

‘ক্ষেতের পরে ক্ষেত চলেছে
ক্ষেতের নাহি শেষ
সবুজ হাওয়ায় দুলছে ও কার এলোমেলো কেশ।
সেই কেশেতে গয়না পরায় প্রজাপতির ঝাক,
চঞ্চুতে জল ছিটায় সেথা কালো কালো কাক।’

গত ২০ মার্চ রোববার সন্ধ্যায় টিউশনি করে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় পাশবিক নির্যাতনের পর তনুকে হত্যা করা হয়।  কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর নিথর দেহ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংকের পাশে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা।

তার বাবার ভাষ্য অনুযায়ী, একটু উঁচু জায়গায় জঙ্গলের মধ্যে তনুকে পেলাম। মাথার নিচটা থেঁতলে আছে।  ওর মুখে রক্ত আর আঁচড়ের দাগ।

তনুর হত্যাকাণ্ডের ৬ দিন পার হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি।

অভিনয় ছাড়াও কবিতার পাশাপাশি তনুর বেশ প্রিয় ছিল গান।  তার কয়েকটি পোস্টে এমনটাই লক্ষ্য করা গেছে।  বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন গানের লাইন দিয়ে।  নিজে গিটার বাজিয়ে গান গাওয়ার একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন ফেসবুকে তিনি।

এসবের পর সমস্যার আভাসও পাওয়া গেছে তনুর স্ট্যাটাস থেকে।  গত বছর ৩ নভেম্বর লেখা এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘কিছু মানুষ এত বাজে.. ০১৯৭১৮৩১৮৫.. এত কল কেন যে দিতেছে উফ...।’

এর নিচে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কে সে, তুমি কি তাকে চেন? রিসিভ করে কথা বলো।’

জবাবে তনু লিখেছিলেন, তিনি তাকে চেনেন না।  তনুর ওই পোস্ট শেয়ার করে অনেকে ফোন নম্বরটির হদিস বের করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
তনুর অ্যাকাউন্টটি ‘রিমেম্বারিং’ করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।  বন্ধু তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের আবেদনের ভিত্তিতে মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ‘রিমেম্বারিং’ করা হয়।
২৫ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে