লক্ষ্মীপুর থেকে :‘আমি একজন শিক্ষিকা। মানুষ গড়ার কারিগর। আমার উচ্চ শিক্ষিত সন্তান জঙ্গি হবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। সে আমার কাছে ফিরে আসুক। আমি দেখতে চাই সে জঙ্গি নাকি মানুষ! সেই অপেক্ষায় আছি।’- এ কথাগুলো বললেন নিখোঁজ দশ সন্দেহভাজন জঙ্গির একজন এটিএম তাজউদ্দিন ওরফে কাউসারের মা স্কুল শিক্ষিকা তাহেরা বেগম।
এটিএম তাজউদ্দিন ওরফে কাউছার অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। সর্বশেষ ২০১৩ সালে অসুস্থ বাবাকে দেখতে দেশে আসেন। এরপর মাঝেমধ্যে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে মায়ের খোঁজ-খবর নিতেন। এক পর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন তিনি। বাড়িতে টাকা পাঠানোও বন্ধ করে দেন।
সম্প্রতি গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত নিখোঁজ ১০ জনের মধ্যে পুত্র তাজের ছবি দেখে ভেঙে পড়েন লক্ষ্মীপুরের পৌর শহরের আটিয়াতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাজের মা তাহেরা বেগম। ছেলের নিখোঁজ হওয়ার খবর তিনি এতদিন জানতেন না। পরে তিনি শনিবার রাতে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এখন একমাত্র ছেলের দেশে ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছেন তিনি। তাজউদ্দিন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আটিয়াতলী গ্রামের আশক আলী ভুঁইয়া বাড়ির মৃত আবদুল্লাহ ভুঁইয়ার ছেলে। পরিবারের সদস্যরা তাজকে কাউছার নামেই জানে। তার বাবা চট্টগ্রামে রেলওয়েতে চাকরি করতেন।
পরিবারের লোকজন জানায়, তাজউদ্দিন তিন ভাই বোনের মধ্যে বড়, তারা দুই বোন এক ভাই। ছোট বেলা থেকেই তিনি খুব শান্ত ছিলেন। তিনি স্থানীয় আটিয়াতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে ১৯৯৭ সালে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯৯ লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি) থেকে ২০০৪ সালে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে (বিএসসি) স্কলারশীপ নিয়ে ২০০৬ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।
অস্ট্রেলিয়ায় ‘দি নিউ সাউথওয়েলস ইউনিভার্সিটি’ থেকে মাস্টার্স শেষ করে ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানিতে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে চাকরি শুরু করেন। সে সময় তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বিয়ে করে সেখানকার নাগরিক হন। তিনি সর্বশেষ ২০১৩ সালে অসুস্থ বাবাকে দেখতে বাড়িতে আসেন এবং এক সপ্তাহ পর অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান।
ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর তার বাবা আবদুল্লাহ ভুঁইয়া মারা যান। তখন বহু চেষ্টা করেও তাজের কাছে বাবার মৃত্যু সংবাদটি পৌঁছাতে পারেনি তার পরিবার। প্রায় এক বছর পর তিনি বাড়িতে ফোন করলে বাবার মৃত্যু বিষয়টি জানতে পারেন। তাহেরা বেগম বলেন, ২০১৩ সালে তাজউদ্দিন বাড়ি থেকে চলে যায়, এরপর থেকে সে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে পরিবারের কাছে টাকা পাঠানোও বন্ধ করে দেয়। রমজানের কয়েকদিন আগে সে শেষবারের মতো বাড়িতে ফোন দিয়ে আমার খোঁজ-খবর নেয়। এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার নিখোঁজের খবর শুনছি। সে দেশে ফিরে আসুক, এটাই আমি চাই।
উল্লেখ্য, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পর নিখোঁজ ১০ জন যুবকের পাসপোর্ট নম্বরসহ ছবি প্রকাশ করে সরকার। এদের মধ্যে তাজউদ্দিনও রয়েছেন। -ইত্তেফাক
১১ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস