প্রতিনিধি, মাদারীপুর: নাম তাঁর অমিত কীর্ত্তনিয়া (৩৭)। তবে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লেখেন ‘ডা. এ আর অমিত’। নেই চিকিৎসা শাস্ত্রের জ্ঞান। কিন্তু চিকিৎসক হওয়ার পথে তাঁকে আটকায় কে? নিজেই হয়ে বসেছেন এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। সেবা দিচ্ছেন রোগীদের। নিজের পরিচয়ে লিখেন মাদারীপুর চক্ষু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। তবে তার সব জারিজুরি আর চিকিৎসা বিদ্যার গভীরতা ধরা পড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে। ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার পানিছত্র এলাকায়।
আজ রোববার দুপুরে ওই হাসপাতালে অভিযান চালায় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে হাসপাতালের বাকিরা পালিয়ে গেলেও পালাতে পারেননি অমিত। এ সময় তাঁকে আটক করে মাদারীপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে আনা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে ৫ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়াও সিলগালা করেন মাদারীপুর চক্ষু হাসপাতাল।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম ফাতেমা জান্নাত বলেন, ‘চিকিৎসা বিষয়ে অমিতের কোনো শিক্ষা নেই। তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করছিলেন। আটক করার পরে আমরা তাঁকে সিভিল সার্জনের কার্যালয় নিই। পরে সিভিল সার্জনের উপস্থিতিতে অমিতকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।’
আটক হওয়ার পরে অমিত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এইচএসসি পাস করেছি। সার্টিফিকেট আছে। তা ছাড়া চক্ষু চিকিৎসায় ঢাকা থেকে একটা কোর্স করেছিলাম। মাদারীপুর চক্ষু হাসপাতালে ৬ মাস সহকারী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছি। ’
রোববার দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেটা তালাবদ্ধ। হাসপাতালের সামনে বড় করে লেখা, এখানে কম খরচে উন্নত সেবা ও কম্পিউটারের মাধ্যমে চক্ষু পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়াও হাসপাতালের পাশে একটি সাইনবোর্ডে আরও ৭ জন চক্ষু চিকিৎসকের নাম রয়েছে। এর মধ্যে অমিতের নাম উল্লেখ নেই।
হাসপাতালের পাশে এক দোকানি বলেন, ‘হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে অমিত ছিলেন। হাসপাতালে সব সময় তাঁকেই দেখতাম। সাইনবোর্ডে লেখা অন্য চিকিৎসকদের তেমন একটা দেখতাম না।’
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ফরিদ হোসেন বলেন, ‘একজন চক্ষু চিকিৎসকের যা অর্জন করা প্রয়োজন তার কিছুই জানা নেই অমিতের। তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাদারীপুর চক্ষু হাসপাতালে এত দিন চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। এখন ওই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
সূত্র: প্রথম আলো