'নজরুল আমাদের সঙ্গে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন'
মোঃ সুমন হোসেন, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, যেখানেই মুক্তি সংগ্রাম, সেখানেই নজরুল। মুক্তিযুদ্ধের শুরু আছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শেষ নেই। কারণ, মুক্তির লড়াই, মানুষের মুক্তির যে অগ্রযাত্রা, এটি অব্যাহত ধারা। এটা নতুন নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। সেখানে মানুষ নতুন করে লড়াই করে, সেই লড়াইয়ে নজরুল আমাদের সঙ্গে ছিলেন, আছে এবং থাকবে। এ কথা মনে করেই আমরা নজরুল চর্চা করছি। মানুষের নতুন করে বাঁচার জন্য নজরুল চর্চার কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা চুপ করে বসে নেই তারা এদেশকে ধবংস করতে চায়। তারা মুক্ত চিন্তার লেখক-প্রকাশ ও বিদেশীদের হত্যা করে ভীতির সৃষ্টি করতে চায়। কিন্ত সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক না কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সন্ত্রাকে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সাথে বাংলাদেশের মানুষও সন্ত্রাসকে প্রত্যাক্ষান করেছে।
শুক্রবার বিকেলে স্মৃতিবিজড়িত নজরুল কবিপত্নী প্রমীলার জন্মস্থান মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ি প্রাঙ্গণে তিনব্যাপী ‘জাতীয় নজরুল সম্মেলন এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, নজরুল আমাদের জীবনে এখন আরো বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। এ কারণেই আমরা লক্ষ করছি, একদিন আমরা জয় বাংলা বলে অসাস্প্রদায়িক শ্লোগানটি ধারণ করেছিলাম। জয় বঙ্গবন্ধু বলে যে নেতাকে সামনে রেখে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। সেই চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করতেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি চুপ করে বসে নেই। সেই চেতনাগুলোকে ধ্বংস করতেই তারা নানাভাবে চেষ্টা করছে। ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করতে, সাম্প্রদায়িকতার নামে জনজীবনকে বিধ্বস্ত করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেখছি- মুক্তচিন্তার লেখকদের উপর হামলা করা হয়েছে, অভিজিৎকে হত্যা করা হয়েছে, ধর্মযাজকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। মসজিদের ভেতর ঢুকে ইমামকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিদেশীদের কাছে ধূলিসাৎ করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেয়নি, বাংলাদেশের মানুষ এটার প্রতিবাদে করেছে, নিজের মতো করে।
মন্ত্রী আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের বই মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বইমেলা অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে। লেখকরা লেখা বন্ধ করবেন না, প্রকাশকরা প্রকাশনা বন্ধ করবেন না। পাঠকরাও বই মেলায় যাওয়া বন্ধ করবেন না বলে অনুরোধ করেন মন্ত্রী।
স্থানীয়দের তেওতায় নজরুল-প্রমীলা বিশ্ববিদ্যালয় ও গন্থাগার স্থাপনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, এটা আমার মন্ত্রণালয়েল বিষয় নয়। তারপরও আমি গুরুত্বসহ প্রধান মন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবহিত করবো। আর গ্রন্থাগারটি নিজেরাই নিজেদের মতো করে গড়ে তুলবেন।
নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ্যামিরিটাস রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দূর্জয়, কবি নাতনি খিলখিল কাজী, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহিতুল আলম, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস, পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আর আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ।
এর আগে বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে মন্ত্রী ও অতিথিসহ নানা শ্রেণি মানুষের অংশগ্রহণে প্রমীলার জন্মভিটা থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে সভাস্থলে আসে। এরপর মন্ত্রী জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখে নজরুল-প্রমীলা পাঠাগার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভা শেষে সেখানে দলীয়, একক আবৃত্তি, নৃত্য ও মনোজ্ঞ সংগীত পরিবেশন করা হয়।
৫ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস