ময়মনসিংহ : অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আগে থেকেই আলোচিত। স্কুলটির নানা অব্যবস্থাপনার খবর স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনের কানেও পৌঁছে গিয়েছিল। তাই বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় এমপি আচমকা হানা দেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আঙিনায়।
সকাল সোয়া ১০টায় ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও তখনো শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে আসছিল। তবে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৪ শিক্ষকের মধ্যে আটজনেরই দেখা পাননি এমপি। সে সময় আর কোনো উপায় না দেখে এমপি ইউএনওকে শিক্ষকদের হাজিরা খাতা জব্দ করারও নির্দেশ দেন।
জানা যায়, ক্লাস চলার সময় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর বাইরে ঘোরাফেরা করা ও ময়মনসিংহ শহর থেকে শিক্ষকদের সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে বুধবার সকালে হঠাৎ সরকারি বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন। সকাল সাড়ে ৯টায় সংসদ সদস্য বিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রদের উপস্থিতি দেখতে পেলেও সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা।
এমপি স্কুলে ঢোকার আনুমানিক ১৫ মিনিট পড়ে আসেন প্রধান শিক্ষক। পরে প্রধান শিক্ষক মো. নাজির উদ্দিন আহমেদ দৌড়ে এসে তাঁর কক্ষ খুলে দিয়ে এমপিকে বসতে দেন। সংসদ সদস্য তখন শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখতে চান।
এ সময় কয়েকজন শিক্ষক এসে স্বাক্ষর করতে চাইলে হাজিরা খাতাটি ওই অবস্থায়ই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামিম আল ইয়ামীনের কাছে দিয়ে জব্দ করার নির্দেশ দেন। পরে এমপি কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন করেন। একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখে এমপি জানতে চান এই ক্লাসে কতজন শিক্ষার্থী। শ্রেণি শিক্ষক ৭৪ জন বললেও উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩০ জন। এরপর অন্যান্য শ্রেণিকক্ষে গেলে সেখানে অর্ধেক শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিল না।
শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন শেষে সকাল ১১টার দিকেও জেলা শহর ময়মনসিংহ থেকে বিদ্যালয়ে আসেন কয়েকজন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসা এমপি তাঁদের বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তাঁরা।
তখন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি (সংসদ সদস্য) ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
ঐতিহ্যবাহী চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি গত বছর শতবর্ষে পা দেয়। কিন্তু আগের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা সময়মতো বিদ্যালয়ে না আসায়। আবার এসেও ছুটির আগে অনেকেই বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায়। অন্যদিকে কিছু ছাত্রের কারণে মাঝেমধ্যেই স্কুলটিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়।
যা নিয়ে অভিভাবক ও সচেতন মহলে আছে নানা আলোচনা। প্রকাশ্যে অনেকেই এর প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। এ খবর পেয়ে ময়মনসিংহের এডিসি (সার্বিক) গত রবিবার এলাকায় এসে বিদ্যালয়টির অচলাবস্থা নিজে দেখতে পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদ্যালয়টির কয়েক দিন সরেজমিনে দেখে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
নান্দাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আইনুল ইসলাম বলেন, তিনি বিদ্যালয়টির খোঁজখবর নিচ্ছেন।
প্রধান শিক্ষক মো. নাজির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। মান-সম্মানের ভয়ে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। এখন এমপির নির্দেশে উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
০৬ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম