ময়মনসিংহ : ইয়াছিন শেখ, বয়স ৯৮। গাড়িয়াল ছিলেন। চালিয়েছেন গরু-মহিষের গাড়ি। সংসারে ছিল ৫ ছেলে ও ৫ মেয়েসহ ১২টি মুখ। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে সবার মুখে আহার যোগাড় ব্যবস্থা করেছেন। ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অক্লান্ত পরিশ্রমী গাড়িয়াল ইয়াছিন শেখ তিলে তিলে নিজের অবস্থা পরিবর্তন করেছিলেন। শূন্য থেকে হয়েছিলেন ৪ বিঘা জমির মালিক। এখন বৃদ্ধ বয়সে সম্বল বলতে দুই বিঘা জমি। আর তাই নিয়ে যত অশান্তি। এই দুই বিঘা জমি নিয়ে ছেলেদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে গত ১১ দিন ধরে তালাবদ্ধ ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন এই নবতিপর বৃদ্ধ।
১৬ বছর আগে ইয়াছিন শেখের স্ত্রী কমলা খাতুন মারা যান। এরপর থেকেই লিখে দিতে হবে জমি, এই দাবি ইয়াছিন শেখের ছেলেদের। একসময় চরমে ওঠে অত্যাচার। মারধর, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে চলেও গিয়েছিলেন মেয়েদের বাড়ি। বাড়িতে ফিরিয়ে আনে ছেলেরাই। এরপর আবার অত্যাচার। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ছেলে হারেজ, আফাজ, রফিকুল, শফিকুলকে জমি বিক্রি করে টাকাও দেন। তবে তাতেও রেহাই পাননি। বড়ছেলে আফাজ আরও জমি লিখে দেওয়ার জন্য অত্যাচার শুরু করে। বৃদ্ধ ইয়াছিন শেখ এবার আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী ঘাগড়া গ্রামে চতুর্থ মেয়ে রুনার বাড়িতে।
২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে ইয়াছিন শেখের ছেলে আফাজ (৫৮) ও নাতি মিন্টু (৩২), মনির(২৮), জমির (২৫) ও শাকিলের (২০) নেতৃত্বে ১০/১২ জন মেয়ে রুনার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ইয়াছিন শেখকে দলিলে টিপসই দিয়ে বাড়ি ও জমিজমা লিখে দিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় বৃদ্ধ পিতাকে মারধর শুরু করে। টেনে-হেচঁড়ে নিয়ে যেতে চায়। এলাকাবাসী এগিয়ে এসে ইয়াছিন শেখকে উদ্ধার করে।
মেয়ে রুনার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই রুমের বাড়িরে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ আছেন ইয়াছিন শেখ। পরিচয় দিয়ে কথা বললে ইয়াছিন শেখ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। বলেন দুই বিঘা জমি নিয়ে তার দুর্দশার কথা। খাবার দেয় না, সেবাযত্ন করে না। জমি লিখে দিতে না চাইলেই মারধর। জমির জন্য এখানে এসেও হানা দেয় তারা।
মেয়ে রুনা (৩৮) জানায়, বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে ইসলামিয়া সরকারি হাইস্কুলে ঝাড়ুদারের কাজ করে। তার স্বামী ইউনুস আলী স্কুলের সামনে একটি দোকানে মিস্ত্রির কাজ করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বাড়ির বাইরে থাকে। এ সময় ভাই আফাজ ও তার লোকজন যাতে তার বৃদ্ধ বাবাকে অত্যাচার না করতে পারেন সেজন্য বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী গত ২৬ সেপ্টম্বর থেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবাকে একটি রুমে তালাবন্ধ করে রাখা হয়।
৩ অক্টোবর ইয়াছিন শেখের মেয়ে রুনা খাতুন এ ব্যাপারে গফরগাঁও থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। থানা পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্ত এখনো সুরাহা না হওয়ায় তালাবদ্ধ ঘরেই থাকতে হচ্ছে ইয়াছিন শেখকে। ইয়াছিন শেখের ছেলে আফাজ উদ্দিন বলেন, বাবাকে কোন অত্যাচার করেনি। আমার পাওনা জমিটুকু লিখে দিলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। -ইত্তেফাক।
০৬ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম