ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) : ‘জিহাদ শব্দকে সন্ত্রাসী শব্দের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। জিহাদ সন্ত্রাস করার জন্যে নয়। জিহাদ এসেছে সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য। আজ মুসলামমানদের অবস্থা করুণ। পাহাড়ে লাশ, নদীতে লাশ, গাছে লাশ, কাটাতারে মুসলমানদের লাশ ঝুলছে। আমরা নির্যাতিত হচ্ছি, নিপীড়িত হচ্ছি, লাশ হচ্ছি, দেশে দেশে মার খাচ্ছে মুসলমান। আজ আমরা ভীরু-কাপুরুষে পরিণত হয়েছি। যদি মসজিদুল আকসার দিকে কু-দৃষ্টিতে তাকানো হয় তবে সেই চোখ থাকবে না। যদি হস্তক্ষেপ করা হয় তাহলে সেই হাত ভেঙ্গে ফেলা হবে।’ কথাগুলো বলছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মাহাসচিব ও বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতী মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গালাহার দারুল কোরআন মাদরাসার বার্ষিক সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমারে মুসলমানদের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে, উচ্ছেদ করা হয়েছে। জেরুসালেমকে ইসরাইলের তথা ইহুদিদের রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ কোরআনের ভাষায় জেরুসালেম হচ্ছে বরকতময় শহর, কল্যাণময় শহর ও মুসলামনদের শহর। বিশ্বের মাঝে চরম ঘৃণিত জুলুমবাজ জাতি হচ্ছে ইহুদি। তাদের কোনো দেশ থাকতে পারে না। যাদের দেশ থাকতে পারে না তাদের রাজধানীও থাকতে পারে না।’
আজ পাগলা টেম্পুরা (ডোনাল্ড ট্রাম্প) জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছে। এই পাগলা টেম্পু (ডোনাল ট্রাম্প) সমস্ত আমেরিকাবাসীকে পাগল জাতিতে পরিণত করেছে। তিনি মনে করেছিলেন জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করলে মুসলমানরা চুপ থাকবে। ফিলিস্তিনীরা কোনঠাসা হয়ে পড়বে। দীর্ঘদিনের প্রতিবাদী আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু না, এটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মুসলমানরা এটা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। ফিলিস্তিনীরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
‘মুসলমানরা বীরের জাতি, মুসলমানরা আমেরিকা, রাশিয়া, ভারতকে ভয় করতে পারে না। মুসলামনরা কোনো শয়তান, নাস্তিক্যবাদি, মুরতাদদের সামনে এমনকি পারমাণবিক অস্ত্রের সামনে জীবন উৎসর্গ করতে পারে, কিন্তু মাথানত করতে পারে না। যদি মসজিদুল আকসার দিকে কু-দৃষ্টিতে তাকানো হয় তবে সেই চোখ থাকবে না। যদি হস্তক্ষেপ করা হয় তাহলে সেই হাত ভেঙ্গে ফেলা হবে। যেসব রাষ্ট্রে মুসলমানদের নির্যাতন করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা হোক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মুসলমান কিন্তু আমরা মোমিন হতে পারিনি। আজ আমরা যদি মোমিন হতাম তাহলে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে নাস্তিকরা আঙ্গুল তুলতে সাহস দেখাতো না। আমরা যদি মুমিন হতাম তাহলে সমাজে ধর্ষণ, বেহায়াপনা, গায়ে হলুদের নামে অশ্লীলতা হতে পারতো না। আমরা কোনো অন্যায় করতাম না।’
তিনি যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা রাস্তায় নারী দেখলে ইভটিজিং কর। অবমাননাকর উক্তি করে বিব্রত কর। ওড়না ধরে টান দেও। কারণ তোমরা মনে করো এটি তোমার বাবা দেখেনি, মা দেখেনি। তবে আজ থেকে শুনে রাখ এটি তোমার বাবা-মা না দেখলেও একজন দেখেন। তিনি হলেন তোমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ।’
‘আমি মুসলমান। নিজেকে মুমিন দাবি করি। কিন্তু আমি ঘুষ খাই, নারী নির্যাতন করি, জুলুম করি, অত্যাচার করি, সন্ত্রাস করি, তাহলে মুমিন তো দূরের কথা আমার তো মুসলমানিত্বই থাকে না। আমি যদি মুমিন হতাম তাহলে অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, সন্ত্রাস, লুটতরাজ, ঘুম, খুন করতে পারতাম না।’
তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘মাটির বাঘ দেখতে একই রকম হলেও তাতে প্রকৃত শক্তি থাকে না। নাস্তিকরা অযথা লাফালাফি করছে। তাদের ঠিকানা ঢাকার এয়ারকন্ডিশন পর্যন্ত সীমিত। তারা এখানে (ঈশ্বরগঞ্জে) এসে কোরআনের বিরোধিতা করতে পারবে না।’
আমাদের মধ্যে যদি বিশ্বাস থাকতো যে, একদিন মহান আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। সমস্ত কর্মের হিসেব দিতে হবে। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাফায়েত দরকার হবে, তাহলে সমস্ত অন্যায় বর্জন করতাম।
সকাল ৮টা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ভারত থেকে আসা আল্লামা সাইয়্যিদ আজহার মাদানীসহ দেশ্যের প্রখ্যাত আলেমরা বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনের শেষাংশে মাদ্রাসার ৮জন হাফিজের মাথায় পাগড়ি পরিয়ে দেয়া হয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস