রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৮, ১০:১৯:৫১

মৌখিক পরীক্ষা হলেই ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে সংসারের হাল ধরতো’

মৌখিক পরীক্ষা হলেই ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে সংসারের হাল ধরতো’

বগুড়া: ‘বুকের ধন তৌহিদুল ইসলাম নিপু খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) পড়তো। ইন্টার্নশীপ করার জন্য ময়মনসিংহের ভালুকায় স্কয়ার টেক্সটাইলে গিয়েছিল। এরপর মৌখিক পরীক্ষা হলেই ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে সংসারের হাল ধরতো।

শনিবার সন্ধ্যায়ও মোবাইল ফোনে বলেছিল— মা আমি ২-১ দিনের মধ্যে বাড়িতে আসবো। কিন্তু, সে তার কথা রাখতে পারলোনা।’ শোকে বাকরুদ্ধ ময়মনসিংহে বিস্ফোরণে নিহত কুয়েট ছাত্র নিপুর মা রোকেয়া খাতুন এসব কথা বলেন।

ময়মনসিংহের ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বিস্ফোরণে নিপু নিহত হন। তার বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা ইউনিয়নের সাজাপুর সোনারপাড়া গ্রামে। রবিবার বিকালে তাদের বাড়িতে গেলে তার মা এসব কথা বলেন। এ সময় পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত বাবা নুরুল ইসলাম নির্বাক দৃষ্টিতে শুধু বাড়ির দরজার দিকে তাকিয়ে থাকেন।

রোকেয়া বেগম জানান, কিছুদিন পর ছেলের লেখাপড়া শেষ হতো। এরপর সে সংসারের হাল ধরতো। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো। রবিবার সকালে নিপুর এক বন্ধুর ফোনের মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর পান বলে তিনি জানান। পাশে থাকা নিপুর বাবা  নুরুল ইসলাম বার বার বাড়ির দরজার দিকে তাকাচ্ছিলেন। হয়তো তিনি তার ছেলে নিপুর অপেক্ষায় আছেন। খবর পেয়ে প্রতিবেশী ও স্বজনরা বাড়িতে ভিড় করছেন। সবাই তাদের প্রিয় সন্তান মেধাবী নিপুর মরদেহের অপেক্ষায় আছেন।

বড় বোন নুসরাত জাহান জানান, তারা নিপুর মরদেহ আনতে ভালুকার দিকে রওনা হয়েছেন।

নিপুর ফুফাতো ভাই সাজাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জানান, নিপুর বাবা নুরুল ইসলাম আগে ব্র্যাকের ব্যবস্থাপক পদে চাকরি করতেন। প্যারালাইসড রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চাকরি থেকে অবসর নেন। মা রোকেয়া খাতুন গৃহিনী। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে নুসরাত জাহান বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে মাস্টার্সে পড়ছে। ছোট ছেলে নিপু স্থানীয় পদ্মপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ২০১২ সালে বাবার কর্মস্থল নিলফামারীর ডোমার উপজেলার গোমনাতী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন নিপু। তারপর খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ভর্তি হন।

নিপুর সহপাঠী আবদুল হাকিম জানান, তারা চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বিভিন্ন টেক্সটাইল মিলে ইন্টার্ন করছিলেন। নিপু অন্য কয়েকজনের সঙ্গে ময়মনসিংহের ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে স্কয়ার টেক্সটাইলে ইন্টার্ন করছিলেন। তিনি আরও জানান, কয়েকদিন পর ইন্টার্ন শেষ হলে মৌখিক পরীক্ষা হতো। এরপর তাদের রেজাল্ট হতো। কিন্তু রান্না করতে গিয়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সব শেষ হয়ে গেলো। নিপু মারা গেলেও তার তিন সহপাঠী হাফিজ, দীপ্ত ও নাজমুল মারাত্মক আহত হয়েছেন।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, তিনি সাজাপুর সোনারপাড়া গ্রামের তৌহিদুল ইসলাম নিপুর ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম জানান, ময়মনসিংহের ভালুকায় কুয়েটের ছাত্র নিপুর মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। তাদের সাজাপুরের বাড়িতে খোঁজখবর নিতে ফোর্স পাঠানো হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে