‘ওরা ডাকাত না’
সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ থেকে: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ৮ জনের মধ্যে রুবেল (২৫) ও শওকাত (৩২) এর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মধ্যবাড়েরা গ্রামে। এ ঘটনায় নিহত টিটু নামের আরেকজনের বাড়ি ময়মনসিংহে হলেও তার পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি রুবেল ও শওকাত ডাকাত না। বন্ধুদের প্ররোচনায় তারা বিপথে যেতে পারেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে এমন দাবি করেন মধ্যবাড়েরা গ্রামের লোকজন।
স্থানীয়রা জানান, শওকাত ময়মনসিংহের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্যাথলজিস্টের কাজ করতেন। এ টাকা দিয়েই চলতো তার সংসার। ক’দিন আগে হারিয়েছেন বাবাকে। মা এখনো হাসপাতালে শয্যাশায়ী। দিন আনে, দিন খায়, কোন খারাপ কাজে তাকে কখনো দেখা যায়নি।
''বুধবার সন্ধ্যায় মীজান নামের একজনের ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন শওকাত'', এমনটি জানান তার স্ত্রী পারভীন (২৯)। কোলে দু'বাচ্চা নিযে বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ''আমার স্বামী ডাকাত না। মানুষ এতো নিষ্ঠুর হইতে পারে! পিটাইয়া ওরে মাইরা ফেললো! আমার দু'সন্তানরে অহন দেখবো কেডা?''
এ সময় স্থানীয় পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে স্বান্তনা দিচ্ছিলেন। কিন্তু বিলাপ করেই যাচ্ছিলেন পারভীন। শওকাতের বোন আক্তারা (৩৫) জানান, ''আমার ভাইরে কেউ বাইল মাইরা (ফুসলিয়ে) লইয়া গেছে। দিন আনে, দিন খায়। এলাকার কোন মানুষ কইতে পারবো না ও খারাপ কোন কাম কোনদিন করছে।''
একই রকম আর্তনাদ করছিলেন রুবেলের বাবা আব্দুল হাই ও মা রাশিদা। অভিন্ন কন্ঠে তারা বলেন, ''আমগর ছেলে খারাপ না। ওর মাথায় একটু সমস্যা আছিল। কেউ ডাক দিলেই যাইতো। কিন্তু আমগর পোলা ডাহাইত না।''
শওকত ও রুবেলের পরিবারের মতোই এমন দাবি করলেন এলাকাবাসীও। প্রতিবেশী মিনারা বেগম বলেন, ''টিভিত দেখছি ডাহাতি করবার গেলে অগোরে মারছে। ওরা কোনদিন খারাপ কোন কাম তো করে নাই। ওরা ডাহাইত হইতে যাইবো কোন দু:খে?''
মধ্যবাড়েরা বাজার এলাকাতেও স্থানীয়রা আলাপ-আলোচনা করছিলেন নিজেদের গ্রামের দু'যুবকের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে। তারাও হিসাব মিলাতে পারছিলেন না তাদের আচার-আচরণের সঙ্গে রটে যাওয়া ডাকাতির ঘটনার।
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী মো. নাজমুল হক বলেন, ''কেউ না কেউ ভুল বুঝাইয়া ওদেরকে বাড়ি থেইক্যা ডাইক্ক্যা লইয়া গেছে। ডাকাতি করার মতো কাম এদের দ্বারা সম্ভব না।'' -বিডি প্রতিদিন
১১ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস