ময়মনসিংহ : মাদক কারবারের বিরুদ্ধে এলাকায় সোচ্চার ছিলেন মো. নুরুজ্জামান জনি (৩২)। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ঠুকে ফাঁসিয়েও দিয়েছিলেন মাদক কারবারি নুরু মিয়া। তাতেও জনিকে বাগে আনা যাচ্ছিল না। এবার সেই মাদক কারবারিদের হাতেই নৃশংসভাবে খুন হলেন নুরুজ্জামান জনি। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের কুমড়ী গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমান মাস্টারের একমাত্র ছেলে। গত শুক্রবার রাতে গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের নহাটা বাজারে তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা রাতেই হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। গতকাল শনিবার ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নহাটা গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে মো. নুরু মিয়া এলাকায় মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত। নুরুর নেতৃত্বে কিছু যুবক এলাকায় মাদক কারবার করত। অন্যদিকে নুরুজ্জামান জনি ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে অনার্সসহ মাস্টার্স পাস করেন। তিনি উপজেলার মাওহা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ছিলেন। জনি সব সময় মাদক কারবারের প্রতিবাদ করতেন। এ নিয়ে জনির সঙ্গে মাদক কারবারি নুরুর বিরোধ দেখা দেয়। এর আগে মাদক কারবারের অভিযোগে নুরু মিয়া একাধিকবার কারাগারে যান। গ্রেপ্তার ও জেল খাটার জন্য নুরু মিয়া জনিকেই দায়ী করতেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে শত্রুতা দেখা দেয়। গত শুক্রবার ইফতারের পর জনি বাড়ি থেকে বের হয়ে নহাটা বাজারে রোকন মিয়ার চায়ের দোকানে বসেন। এ সময় নুরু মিয়ার নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র দল জনিকে সুজন মাহমুদের কম্পিউটারের দোকানের সামনে ডেকে নেয়। সেখানে যাওয়ার পর সশস্ত্র দলটি জনির ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা জনির বুক ও মুখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। প্রাণ বাঁচাতে তিনি দৌড়ে বাজারের কাছে খোকন মিয়ার পুকুরপারে গিয়ে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাঁকে সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জনিকে মৃত ঘোষণা করেন।
জনির মৃত্যুর খবর নহাটা গ্রামে পৌঁছার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১০টার দিকে কয়েক শ লোক হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নুরু মিয়া, কাঞ্চন মিয়া, জিলু মিয়া, শিরু মিয়া, মোজাম্মেল, শামছু, হেলিম ও আব্দুল খালেকের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গৌরীপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মাদকসেবী ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন জনি। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।