ময়মনসিংহ থেকে : রাত ১০টার পর কোনো ধরনের আয়োজন ছাড়াই অতি গোপনে দুই বোনকে নিয়ে মাদরাসা ছাত্রীকে (১৪) বিয়ে করতে আসেন বাহরাইন প্রবাসী পয়ত্রিশোর্ধ নুরুল ইসলাম। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে এ ঘটনার খবর পান এ প্রতিনিধি।
খবর জেনে ইউএনও ওই বাড়িতে গেলে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পায় মাদরাসা ছাত্রী। এ সময় মেয়ের পূর্ণ বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না মর্মে মুচলেখা আদায় করা হয় মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে। অন্যদিক একই বয়সের আরো দুই স্কুলছাত্রী রক্ষা পায় বাল্যবিয়ে থেকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ও বিকেলে তিনটি ঘটনাই ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইলের পৃথক গ্রামে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের পুত্র নুরুল ইসলাম। গত প্রায় সাত বছর ধরে তিনি বাহরাইনে বসবাস করছেন। গত কয়েক মাস আগে তিনি ছুটিতে এসে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
এ অবস্থায় উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে মৃ'ত আতাহার আলীর মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে মমতা বেগমের সঙ্গে বিয়ের দিন তারিখ ধার্য্য হয় গত বৃহস্পতিবার। এলাকার লোকজন জানায়, মেয়ের বয়স কম হওয়ায় তার পরিবারের লোকজন কোনো ধরনের আয়োজন না করে কৌশলে বর পক্ষকে রাতে আসতে বলেন।
এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর বরের লোকজন বাড়িতে প্রবেশ করতেই এলাকার কয়েক যুবক এ প্রতিনিধিকে ফোনে জানায়। পরে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুর রহিম সুজনকে জানালে তিনি একদল পুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে যান।
এ সময় ঘরের দরজা বন্ধ করে খাওয়া দাওয়ার প্রস্তুতিকালে ইউএনও ও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দরজা খোলা হয়। এক পর্যায়ে মেয়ের বয়সের জন্ম নিবন্ধন চাইলে তা দেখাতে পারেননি পরিবারের লোকজন। পরে পূর্ণ বয়স না হলে বিয়ে দেবেন না মর্মে মা হাসিনা বেগম মুচলেখা দিয়ে রক্ষা পান।
অন্যদিকে আজ শুক্রবার বিয়ের আয়োজন চলছিল গাঙাইল ইউনিয়নের উন্দাইল গ্রামের মো. খোকনের বাড়িতে। তাঁর মেয়ে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এই অবস্থায় আজ শুক্রবার ছিল পাশের একটি গ্রামের ব্যবসায়ী ছেলের সঙ্গে বিয়ের দিন। বিকেলে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বাড়িতে গিয়ে বিয়ের আয়োজন বন্ধ করে দেন।
পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নানের সম্পৃক্ততা থাকায় তাকে ভর্ৎসনা করা ছাড়াও মেয়ের বাবা-মায়ের কাছ থেকে মেয়ের পূর্ণ বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না মর্মে মুচলেখা আদায় করা হয়। এ সময় বর পক্ষ পালিয়ে যায়।
এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কাদিরপুর গ্রামের মৃ'ত আব্দুলের মেয়ে তানজিলার বিয়ের আয়োজন চলছিল। এ খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে পাঠিয়ে বিয়ে বন্ধ করান ইউএনও। কিন্তু রাতেই ওই মেয়েকে গোপনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নানার বাড়ি খারুয়া ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর গ্রামে। সেখানে বিয়ের প্রস্তুতিকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য গিয়ে বিয়ের সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেন।