ময়মনসিংহ: বিএ পাস তিনি। ৬৫ বছর বয়স হলেও সংসারের ঘানি টানতে ময়মনসিংহ নগরীতে করতেন টিউশনি। কোনভাবে চলছিল জীবনের দিনগুলো। হঠাৎ আসলো করোনার ঝড়। বন্ধ হলো টিউশনি। বন্ধ হলো আয় রোজগার। জীবন তো আর থেমে থাকে না। সেই গৃহশিক্ষক পরিবারের প্রয়োজনে ধরলেন রিকশার হাতল। গৃহশিক্ষক থেকে হয়ে গেলেন রিকশাচালক। ভাগ্যের নির্ম'ম পরিহাসে প্রিয় শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি নয়, তিনি এখন যাত্রী নিয়ে ঘুরে বেড়ান এ নগরীর অলিগলিতে।
হ'তভাগ্য এ মানুষটির নাম আবুল কালাম আজাদ। বসবাস ময়মনসিংহ নগরীল কেওয়াটখালী এলাকাতে। তবে আবুল কালাম আজাদের এমন জীবনকাহিনী জেনে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বিষয়টি জেনে রাতের বেলাতেই ওই বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। পরিবারটির হাতে তুলে দেন একটি সেলাই মেশিন, এক মন চালসহ আরও কিছু খাদ্যসামগ্রী।
আবুল কালাম আজাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে তিনি নগরীর কেওয়াটখালী ময়নার মোড় এলাকায় বসবাস করেন। ১৯৮১ সালে তিনি খুলনার দৌলতপুর কলেজ থেকে বিএ পাস করেছিলেন। পড়াশোনা শেষে তিনি মাদারীপুর জেলাতে একটি স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। ২০১০ সালে তিনি ময়মনসিংহ নগরীতে চলে আসেন। ৫ ছেলেমেয়ের মাঝে ২ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছেলেরা এখন বিভিন্ন কলেজে লেখাপড়া করে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনার আগে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। প্রায় ১৪ হাজার টাকা আয় হতো। ছেলেরাও টিউশনি করতো। কোনভাবে সংসার চলতো। এমন সময় আসলো করোনা। মে মাস থেকে তিনি শুরু করলেন ব্যাটারী চালিত রিকশা চালানো। এখন প্রতিদিন ৩-৪ শ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে অন্তত ডাল-ভাতটা জোগাড় হয়। রোদ বৃষ্টিতে ভিজে এমন পরিশ্রমের কাজটা করা ছাড়া তার আর বেঁচে থাকার কোনো পথ খোলা নেই।
এদিকে এ বিষয়টি গতকাল বৃহস্পতিবার অবহিত হন ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান। খবর পেয়ে রাতেই আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে গিয়ে তিনি হাজির হন। সাথে নিয়ে যান একটি সেলাই মেশিন। নিয়ে যান এক মন চাল, ৪ লিটার তেল, ৮ কেজি আলু, ৪ কেজি ডালসহ বেশ কিছু খাদ্যসামগ্রী। এসব পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ের আবুল কালাম আজাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। আবুল কালাম আজাদ বলেন, যারা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি তাদের জন্য দোয়া করেন। দোয়া করেন প্রতিটি মানুষের জন্য। করোনা কেটে যাক। কাজ কর্ম করে মানুষ আবার ভালোভাবে বেঁচে থাকুক।