জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ: কী নিষ্পাপ শম্পার চোখের পানি! যারা একটু বেশিই আবেগি মানুষ, তারা হয়তো ছবিটা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। তারা হয়তো ভাবছেন সমাজব্যবস্থা কতটুকু নোংরা হলে বাবার চিকিৎসার জন্য শম্পার মতো ১০ বছর বয়সী একটা মেয়েকে ভ্যান চালাতে হয়।
জামালপুরের সদর উপজেলার নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শম্পা। সে নাকাটি গ্রামের শফিকুল ইসলাম ওরফে ভাসানীর দুই মেয়ের মধ্যে ছোট।
শম্পার বাবা শফিকুল ভ্যান চালাতেন। পাঁচ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় তার এক পা ভেঙে যায়।পরিবারের প্রায় সবকিছু বিক্রি করে সাত লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও তার পা ভালো হয়নি। ফলে ঘরে পড়ে আছেন শফিকুল।
এমন অবস্থায় পরিবার ও বাবার চিকিৎসার জন্য ভ্যান চালিয়ে সংসারের দায়িত্ব নেয় শম্পা। দেড় বছর ভ্যান চালিয়ে সংসার চালানোর বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। এমনকি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকালে শম্পাদের বাড়িতে যান জামালপুরের ডিসি মোহাম্মদ এনামুল হক। শম্পাদের পরিবারের পরিস্থিতি জেনে নিয়ে ওইদিনই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠান।
এরপর প্রধামন্ত্রীর নির্দেশে বুধবার (২ ডিসেম্বর) সকালে তিনি আবারও শম্পাদের বাড়িতে যান এবং শফিকুলকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ পরিবারের থাকার জন্য পাকাঘর তৈরির কাজও শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শম্পার বিষয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিশু শম্পা বলে, ‘আমি আর ভ্যান চালাব না। এখন আমি লেখাপড়া করব।’
সে আরও বলে, ‘এখন আর আমার চিন্তা নাই। চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে বিগত দিনের কষ্টের কথা মনে পড়ে যায় শম্পার মা নেবুজা বেগমের। তিনি বলেন, ‘গত ছয় বছরে কোনো ঈদে শম্পার মুখে সেমাই তুলে দিতে পারি নাই। ঠিকমতো খাবারও দিতে পারি নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার স্বামীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন, সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন, নতুন পাকাঘর করে দিচ্ছেন, পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমি এতই আনন্দিত হয়েছি যে এখন কথা বলতে পারছি না। কীভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’-জাগো নিউজ