শাহীন সরদার, বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বহুল প্রতীক্ষিত সপ্তম সমাবর্তন মঙ্গলবার শিল্পাাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তনকে সামনে রেখে সকল ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১১ টায় সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর। সমাবর্তন বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিককের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। এছাড়াও সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। বেলা ১২ টার দিকে আচার্যের বক্তব্য ও সমাবর্তনের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
গ্রাজুয়েটরা সমাবর্তনের গাউন ও টুপি পরে গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে কৃষি অনুষদের করিডোর থেকে একটি সমাবর্তন মিছিল বের করে শিল্পাাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে যায়। সেখানে বেলা দেড়টা পর্যন্ত সমাবর্তন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
সপ্তম সমাবর্তনে স্নাতক পর্যায়ে সাতজন ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৮৬জন গ্র্যাজুয়েটকে ‘গোল্ড মেডেল’ প্রদান করা হবে। উল্লেখ্য, এ বারের সমাবর্তনে স্নতক পর্যায়ে এক হাজার ৯১৯ জন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দুই হাজার ৮৫১ জন এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী ৩৮ জন শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
সমাবর্তন শিক্ষার্থী আরিফুল হক বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার। সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। নিজেকে খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছে। প্রতিবছর যাতে সমাবর্তন হয়, এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টিআকর্ষণ করছি। ‘গোল্ড মেডেল’ মনোনীত আরেক শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার আজাদ বলেন, আমি এর আগেও একটি গোল্ড মেডেল পেয়েছি। কিন্তু এবার মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে নেবো। ভাবতেই ভালো লাগছে। কালকের দিনটি আমার জন্য স্মরণীয় হতে যাচ্ছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহ। পুরো ক্যম্পাস জুড়ে নিয়মিত টহল দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ক্যম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ.কে.এম জাকির হোসেন বলেন, সমাবর্তন অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে পুরো ক্যাম্পাস ও বহিরাগতদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সমাবর্তনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রেলওয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। এছাড়াও সমাবর্তনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ভবন ও রাস্তাঘাট জুড়ে করা হয়েছে আকর্ষণীয় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। আশা করছি কেনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সমাবর্তন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
সমাবর্তনের সার্বিক দিয়ে নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে সমাবতর্নের সকল আয়োজন সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করতে পেরে ভালো লাগছে। দেশের কৃষি উন্নয়নে ঈপ্সিত গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে সার্বিক নেতৃত্ব দানে সমর্থ দক্ষ কৃষিবিদ, শিক্ষক, গবেষক ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ তৈরি করা আমাদের অন্যতম প্রাাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামীর দিনগুলোতে এদেশের কৃষি উন্নয়ন ও গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তীর্ণ গ্রাজুয়েটগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৮সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল মোনায়েম খানের নেতৃত্বে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় সমাবর্তন ১৯৭২সালে ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে হয় । তৃতীয় সমাবর্তন ১৯৯৪সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আচার্য হিসেবে প্রদান করেন। চতুর্থ সমাবর্তন ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়। পঞ্চম সমাবর্তন ২০০৩সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্টপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত গহয়। ১৯৯৮সালে প্রথম বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের জনক ‘নোবেল লরিয়েট ড. আর্নেস্ট বোরলগ’ কে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২০১১সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে গ্রাাজুয়েটদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস