মুন্সীগঞ্জ থেকে: বনানীর দুই তরুণী নির্যাতন মামলার অন্যতম আসামি আব্দুল হালিম ওরফে নাঈম আশরাফকে গ্রেফতারের সময় এতটাই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল যে স্থানীয় পুলিশের সহায়তাও নেয়নি পুলিশ সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা।
তবে অভিযানের মাত্র এক ঘণ্টা আগে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপারকে শুধু অবহিত করা হয়েছিল তার জেলায় একটি অভিযান পরিচালনা করা হবে। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বুধবার (১৭ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ‘বনানীর দুই তরুণী নির্যাতন মামলার আসামি নাঈম আশরাফকে গ্রেফতারের আগে এ বিষয়ে কোনও তথ্য জানতো না জেলা পুলিশ। অভিযানটি পরিচালনার মাত্র এক ঘণ্টা আগে রাত পৌনে আটটার দিকে আমাকে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়, জেলায় একটি অভিযান পরিচালনা করা হবে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তারা স্থানীয় পুলিশের সহায়তা নেবে। তবে তারা কোনও সহায়তা নেননি। অভিযান শেষে শুধু জানতে পারি, নাঈমকে লৌহজং থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে তাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় পুলিশের কেউ আসামিকে দেখেনি। অভিযানটি কারা পরিচালনা করেছেন সে সম্পর্কেও আমরা অবহিত নই। ’
এদিকে, লৌহজং থানার ওসি মো. আনিচুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে ছিল বনানীর দুই তরুণী নির্যাতন মামলার দুই নম্বর আসামি নাঈম। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে ওই বাসা থেকে আর কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।’
লৌহজং সার্কেলের এএসপি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতারের অভিযানের ব্যাপারে আমি তেমন কিছু জানি না। তবে থানার ওসি জানত। আমি এইমাত্র ওসির সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ঢাকা পুলিশের একটি দল অত্যন্ত গোপনে অভিযান পরিচালনা করে চলে গেছে। অভিযানে নাইম আশরাফকে গ্রেফতার করা হয়।’
এএসপি সাইফুল আরও বলেন, ‘আসামী এখানে কতদিন ধরে অবস্থান করছি, তা আমাদের জানা নেই। সম্ভবত মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত করে অভিযান চালানো হয়। সত্যি বলতে, অভিযানে কতজন পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছে কিংবা তারা অভিযানের সময় ইউনিফর্ম পরিহিত ছিল নাকি সাদা পোশাকে ছিল, সেসব তথ্যও বলতে পারব না।’
বনানীতে দুই তরুণী নির্যাতন মামলার অন্যতম আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দুই নম্বর আসামি নাঈমের প্রকৃত নাম আব্দুল হালিম। সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের একজন দিনমজুরের ছেলে সে। এসএসসি পরীক্ষার পরই সে গ্রাম ছাড়ে। নিজের নাম পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) আলোচিত এই মামলার পাঁচ আসামির অন্যতম দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে সোমবার (১৪ মে) সন্ধ্যার পর রাজধানীর নবাবপুর ও গুলশান এলাকা থেকে যথাক্রমে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও বডিগার্ড রহমত আলী ওরফে আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করা করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই তরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দেয়। এরপর তাদের বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নির্যাতন করে সাফাত ও নাঈম। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে। নির্যাতন মামলার আসামিরা হলো- সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস