মুন্সিগঞ্জ : মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের বল্লাল বাড়ি গ্রামে খনন করে ইতিহাসখ্যাত রাজা বল্লাল সেনের প্রাচীন প্রাসাদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বল্লাল বাড়ি গ্রামের একটি পানের বরজের মাটি খুঁড়ে এই প্রত্ননিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায়।
গত সপ্তাহ থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে সোমবার খননকাজ শুরু হয়। এই খননকাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশের ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও চীনের অধ্যাপক চাই হোয়াং বোর নেতৃত্বে বড় একটি দল এই খননকাজে অংশ নিয়েছেন।
অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি ছিল সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ। খনন করে পাওয়া দুর্গটি বর্গাকার। এর প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ২৭২ মিটার। দুর্গের চারদিকে পরিখা ছিল। পরিখা প্রায় ৬০ মিটার প্রশস্ত। রামপাল কলেজের কাছে এখনো একটি পরিখা দৃশ্যমান আছে। অন্যগুলো ভরাট করে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে।
মুস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বল্লাল সেনের এই প্রাসাদ একটি দুর্গ। কিন্তু খনন না করার কারণে আগে এর সন্ধান পাওয়া যায়নি। গতকাল খননকাজ শুরু করার মাধ্যমে সেই চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। মাটির দু-তিন ফুট নিচে প্রাচীন ইট, ইটের টুকরা, মৃৎপাত্রের টুকরা ও কাঠ-কয়লা পাওয়া গেছে। প্রথমে খননকাজ শুরু করা হলে প্রাচীন প্রত্নস্থানের নিদর্শন হিসেবে এই জিনিসগুলো পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে বিস্তৃত আকারে খনন করলে দেয়াল বেরিয়ে আসে। খননকাজ চালিয়ে যেতে পারলে বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ, মন্দির, রাস্তাঘাট সবকিছু পাওয়া যাবে।
রাজা বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদের সন্ধান পাওয়ার খবর পেয়ে পরিদর্শনে যান মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুখ আহম্মেদ।
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বলেন, নিদর্শনটির খননকাজের মধ্য দিয়ে প্রাচীন নিদর্শনের যে সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে, এতে বিক্রমপুরের ইতিহাস সমৃদ্ধ ছাড়াও প্রত্নতত্ত্বনগরী মুন্সিগঞ্জ আরও বেশি আকৃষ্ট করবে পর্যটকদের।
সেন রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা ছিলেন বল্লাল সেন। তার শাসনকাল ১১৬০ থেকে ১১৭৯ খ্রিষ্টাব্দ। তিনি ছিলেন সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের ছেলে। বল্লাল সেন ছিলেন লক্ষ্মণ সেনের বাবা। বল্লাল সেনের নামেই মুন্সিগঞ্জের এই গ্রামটির নাম ‘বল্লাল বাড়ি’। সেখানেই মাটি খুঁড়ে সন্ধান মেলে বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদের।-জাগো নিউজ