মুন্সীগঞ্জ : বাংলা চলচ্চিত্রের কাহিনি নয়, ছিল অদম্য ভালোবাসার এক প্রতিচ্ছবি। রোমানার ভালোবাসার বাজি! নিজের কিডনি দিয়ে জীবন বাঁচাতে বিয়ে করেছিলেন রাজিবকে। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। শেষ অবধি সেই বাজিতে রোমানা হারলেন। প্রিয় মানুষ রাজিবকে আর বাঁচিয়ে রাখতে পারলেন না। গতকাল সোমবার রাজিব চলে গেলেন সেখানেই, যেখান থেকে ফেরে না কেউই। রাজধানীর ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। আর তাতেই আবারও একা হয়ে গেলেন রোমানা। আনোয়ার হোসেন রাজিব। ৩১ বছরের যুবক।
একদিন জানলেন তাঁর দুটি কিডনিই অকেজো। নেই কিডনি দেওয়ার মতো কেউ, কেনার সামর্থ্যও যে নেই। মনে নিদারুণ কষ্ট তাঁর। এই কষ্ট পোড়াচ্ছে মা-বাবাকেও। যদি মিলত অন্ধকার সুড়ঙ্গে একটু আলোর রেখা। সব আশার প্রদীপ নিভে যাচ্ছে একে একে। ঠিক তখনই আশার আলো হয়ে এলেন রোমানা। প্রস্তাব দিলেন, তিনি একটি কিডনি দিতে চান। অবিশ্বাস্য লাগে রাজিবের। শুধু তাকিয়ে থাকেন। বললেন, আত্মীয় না হলে তো কিডনি দিতে আইনে বাধা আছে। এবার চূড়ান্ত প্রস্তাবটিই আসে রোমানার কাছ থেকে। বললেন, শুধু কিডনিই নয়, এর আগে তিনি বিয়েও করতে চান।
মানবিক প্রেমের এই অনিন্দ্যসুন্দর ঘটনাটি ঘটে ঢাকায় ২০১৭ সালের শুরুর দিকে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের বেজগাঁও ইউনিয়নের সুন্দিসার গ্রামে রাজিবের বাড়ি। আর রোমানা তাসমিনের বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের ভাটিপাড়া গ্রামে। তাঁরা থাকতেন ঢাকার লালবাগের একটি ভাড়া বাসায়। ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি রাজিবকে বিয়ে করেন রোমানা।
কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রাজিব ও রোমানা ভারতে যান। সেখানকার চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আরো কিছু সমস্যা পান। রাজিবের শরীরে খুঁজে পান হেপাটাইটিস সিসহ নানা রোগের উপসর্গ। আগে অন্য রোগের চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এর পর কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা জানানো হয়। তাই তাঁরা সেখান থেকে দেশে ফিরে এসে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনির ডায়ালিসিসসহ চিকিৎসা নিচ্ছেলেন।
জানা গেছে, সেই সময়ে ফেসবুকের কল্যাণে রাজিবের সঙ্গে পরিচয় হয় রোমানা তাসমিনের। ফেসবুকেই জানতে পারেন, কিডনি রোগী রাজিবের বাঁচার আশা প্রায় শেষ। রোমানা পেশায় প্যারামেডিক। কেরানীগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালে তিনি কর্মরত। তাঁর সামান্য আয়ে রাজীবের চিকিৎসা চলছিল। রাজীব পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালে সিনিয়র অফিসার পদে চাকরি করতেন।