বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:২৮:৫৪

‘মাটির রাস্তায় স্বর্ণের ছোয়া আইভী তুমি লক্ষ্মী সোনা’

‘মাটির রাস্তায় স্বর্ণের ছোয়া আইভী তুমি লক্ষ্মী সোনা’

বিল্লাল হোসেন রবিন : ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৯টা। নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জের আট নাম্বার ওয়ার্ডের পাঠানটুলি বাসস্ট্যান্ডে আসেন ১৪ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। পূর্ব ঘোষণা থাকলেও এলাকাবাসী জানতো না তিনি আসবেন। তাই মেয়রের জন্য কারো অপেক্ষা ছিল না।

কিন্তু কালো রংয়ের জিপ গাড়ি থেকে নামার পর এলাকায় রটে যায় আইভী আপা এসেছেন। মুহূর্তেই চারপাশে রব ওঠে- ‘ওই যে আইভী আসছে’। বয়স্করা বলে উঠেন- ‘চুনকার মাইয়্যা আইছে’। অল্প সময়ের মধ্যে আইভীর পিছনে হাঁটতে থাকে এলাকার শত শত মানুষ। তারা স্লোগান তোলেন, ‘আইভী আপার সালাম, ঘরে ঘরে দিলাম’, ‘আইভী আপা, নৌকা’। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পাঠানটুলি এলাকা। সোমবার প্রতীক বরাদ্দ পেলেও গতকাল মঙ্গলবার মূলত প্রতীক নিয়েই চলে প্রচারণা।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা দিয়ে আইভীর পেছনে মানুষের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে আইভী এসেছে শুনেই বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নারী বেরিয়ে আসে রাস্তায়। আগে থেকেই অপেক্ষা করতে থাকে কখন আসবেন আইভী, কখন করবেন সাক্ষাৎ। এলাকাবাসীও আইভীকে হতাশ করেনি। অনেক এলাকায় আগে থেকেই তৈরি ছিল ফুলের মালা। আবার অনেকে বাড়ির গাছের ফুল ছিড়ে পাপড়ি ছিটিয়ে বরণ করে নেন আইভীকে। আইভী অনেককেই হতাশা করেনি।

পর্যায়ক্রমে ওই ওয়ার্ডের পাঠানটুলী, গোদনাইল, এনায়েতনগর, প্রধানবাজার, আইলপাড়া, চৌধুরীবাড়ি, তাঁতখানা এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি। ওই সময় আইভীকে দেখতে বিভিন্ন বাড়ি-ঘর থেকে প্রচুর উৎসুক নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে আসেন। আইভীও তাদের সঙ্গে কথা বলেন। কুশল বিনিময় করেন। কখনো কখনো হাত নেড়েছেন। আবার নারীদের সঙ্গে আলিঙ্গন ও হ্যান্ডশেকও করেন। ভোটারদের কাছে জানতে চেয়েছেন কাকে ভোট দেবেন। অনেক নারীই বলেছেন আপনাকে (আইভী), আবার কেউ বলেছেন নৌকাকে।

আইলপাড়া এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে বসা ছিলেন ৭৫ বছর বয়সী শহিদুল ইসলাম। আইভী ছুটে যান তার কাছে। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি আইভীকে বলেন, ‘মারে আমি তো চলতে পারি না, ভোট দিমু কেমনে’। তখন আইভী বলেন, এলাকার লোকজন আপনাকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাবে, টেনশন কইরেন না। মুচকি হেসে আইভীর কথায় আশ্বস্ত হন শহিদুল ইসলাম।

পাঠানটুলী, আইলপাড়াতে এক সময়ে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো এলাকার মানুষকে। আইভীর আমলেই এলাকায় উন্নত রাস্তা ও ড্রেন হয়েছে। আইলপাড়া এলাকার রহমান স্টোরে সাইফ ও আরজু বলেন, আমরা আদমজী ইপিজেডে চাকরি করি। ‘এ রাস্তাটি আগে অনেক খারাপ ছিল। এখন তো ভালো। এত সরু গলিতে এমন চড়া রাস্তা অকল্পনীয়’। আইভী যখন ওই এলাকা দিয়ে হেঁটে যান তখন কয়েকজন নারী স্লোগান তোলেন, ‘মাটির রাস্তায় স্বর্ণের ছোয়া আইভী তুমি লক্ষ্মী সোনা’।

এ স্লোগান শুনে আইভীর ঠোটের কোণেও ছিল স্বস্তি আর প্রাপ্তির হাসি। এরপর আইভী যান দক্ষিণ এনায়েতনগর এলাকায়। সেখানে সকাল থেকেই জটলা ছিল একদল নারীর। সত্তর বছরের সাবিকুন নাহার আইভীকে দেখেই জড়িয়ে ধরেন। কপাল ও মুখে চুমু খান। বেশ খানিকটা ধরে ছিল সেই আলিঙ্গন। যাওয়ার সময়ে আইভীকে বলেন, ‘মারে তুই কেরে আইসস কষ্ট কইরা, আবার আবি তহন তরে মালা পড়ামু।’ বৃদ্ধার সেই কথায় আইভীর চোখে টলমল পানি। গড়িয়ে পড়ার আগেই নিজেকে সামলে নেন।

পশ্চিম এনায়েতনগর প্রধান বাজার এলাকায় বিভিন্ন ভবন থেকে লোকজন হাত নেড়ে স্বাগত জানান আইভীকে। আইভীও হাত নাড়েন। সাইফুজ্জামান নামের একজন চাকরিজীবী বলেন, ‘আইভী আসলেও পাস না আসলেও পাস’।

এলাকার সখিনা মঞ্জিল থেকে কয়েকজন নারীর সঙ্গে শিশুরাও বেরিয়ে আসে। ভোটার না হলেও শিশুরা আইভীকে দেখে বলেন, ‘আপা আমিও আপনারে ভোট দিমু।’ আইভী বলেন, তুমি কী ভোটার? উত্তরে ওই শিশু বলেন, ‘আম্মারে কমু আমারে লগে লইয়া ভোটটা যাতে আইভীরে দেয়।’ ওই বাড়িরই আছিয়া সুলতানার শখ ছিল আইভীর হাত ধরবে। নিরাশ করেননি আইভী। আইভীর হাত ধরেই বলে উঠেন, মনটা শান্তি হলো, আপনাকেই ভোট দিমু আপা।

আইভী পরে এনায়েতনগরে মোল্লাবাড়ি এলাকায় ফকির হাছান আলী মাজারের সামনে দোয়ায় অংশ নেন। তখন এলাকাবাসী বিশুদ্ধ খাবার পানির দাবি রাখেন।

এদিকে গণসংযোগ চলাকালেই চলন্তপথে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন আইভী। বলেন, ‘আমি সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। আমি চাচ্ছি সব এলাকায় যেতে। মানুষকে ভোট দিতে আহবান রাখতে। বিগত দিনে আমি চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো উন্নয়ন করতে। চেষ্টা করেছি উন্নয়ন শেষ করতে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেক চলমান আছে। বিগত নির্বাচনেও আমার জন্য মা বোনেরা এগিয়ে এসেছিল। এবারও আসছে। শুধু নারী না, পুরুষরাও আসছে। আমি মনে করি এটাই আমার সার্থকতা। অনেক তরুণ ভোটাররাও আসছে। আমি বিগত দিনে কোনো দলবাজি করিনি। শুধু উন্নয়ন করেছি।’

গণসংযোগের সময় আইভী বক্তব্য দেয়ার চেয়ে বেশি এলাকাবাসীর খোঁজ নিয়েছেন। কুশল বিনিময়, দেখা সাক্ষাৎ করাই ছিল মূল লক্ষ্য। তবে বারবার ভোটারদের বলেছেন- এবার আমার মার্কা নৌকা। গতবার দোয়াত কলম মাকায় ভোট দিয়েছেন, এবার আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। এমজমিন
৭ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে