তানভীর হোসেন : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে জয়ের পর ‘ছোট বোন’ সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ‘ফাইন’ (জরিমানা) করে আইসক্রিম খাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। কিন্তু আইভীর নির্বাচনে জয়ের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আইসক্রিম ইস্যুতে কোনও সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। তাই জনমনে প্রশ্ন,আইভীর কাছ থেকে ‘আইসক্রিম’ কবে খাবেন শামীম ওসমান?
নাসিক নির্বাচনে অনেক নাটকীয়কতার মধ্যে একটি ছিল, নৌকা প্রতীকে আইভীর বিজয়ের পর তাকে ‘জরিমানা’ করে আইসক্রিম খাবেন এমপি শামীম ওসমান। সংবাদ সম্মেলন করে সে কথা শামীম ওসমান বললেও আইসক্রিম খাওয়ার অধ্যায়ের আপাতত সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।
৯ ডিসেম্বরের ওই সংবাদ সম্মেলন শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে আইভীর জয়ের পর আমি নেত্রীর সামনে গিয়ে আইভীকে একটি ফাইন করবো। আমি আইসক্রিম খেতে ভালোবাসি। আমার ছোটবোন আইভীকে সেদিন আমি আইসক্রিম খাওয়াতে ফাইন করবো।’
কিন্তু ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলবল নিয়ে দু’বার দেখা করলেও সেখানে দেখা মেলেনি শামীম ওসমানের।
এদিকে,আইসক্রিম ইস্যুতে গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল, যা এখন অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জবাসীর কৌতুহল ছিল সে আইসক্রিম ইস্যুতে। তাদের ধারণা ছিল, যাই ঘটুক অন্তত শামীম ওসমান ও আইভীর সেই আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে বড় ধরনের কোনও পজেটিভ দিক থাকতে পারে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে।
দিন যত যাচ্ছে ততই আইসক্রিম খাওয়ার ইস্যুতে চাপা পড়ে যাচ্ছে। কারণ ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনের পরদিনই সকালেই পরাজিত বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের বাসায় মিষ্টি নিয়ে যান আইভী। মিষ্টি বিনিময়ের পর সেদিন রাতেই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন আইভী। সঙ্গে যান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও।কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান ছিলেন না। ফলে আইসক্রিম খাওয়ার পর্বটিও হয়নি।
অপরদিকে, ৯ ডিসেম্বরের ওই সংবাদ সম্মেলনে আইভীকে নৌকা খচিত দুটি শাড়ি উপহার হিসেবে পাঠানোর আগে গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা প্রদর্শন করেন এমপি শামীম ওসমান। যদিও আইভীকে সে শাড়ি এখনও পড়তে দেখা যায়নি।
এর মধ্যে ৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এক সভায় বলেনে, আইভীকে আমি স্নেহ করি আর মেয়র পদকে সম্মান করি। আইভীর সঙ্গে আমার কোন ধরনের বিরোধ ছিল না। আমি আইভী ও শামীম ওসমানসহ সব জনপ্রতিনিধিদের বলবো, অতীতের মান অভিমান ভুলে আসুন, একসঙ্গে উন্নয়নের জন্য কাজ করি।
ওই বক্তব্যের দুইদিন পর ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেলিম ওসমান ও আইভীকে দেখা গেছে। দু’জন মিলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবিও তুলেছেন। কথা বলেছেন নানা বিষয়ে। এখানে উল্লেখ্য, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে সেলিম ওসমানের কাছে ফোন করে দোয়া চেয়েছিলেন আইভী। ১৫ ডিসেম্বর আইভী তার ফোনে ওই দোয়া চান সেলিম ওসমানের কাছে, যা ১৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেই তিনি জানান।
শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র জানান, ৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে নৌকার পক্ষে তথা আইভীর পক্ষে কথা বলা এবং সেদিন দুটি শাড়ি পাঠানোর পর শামীম ওসমান ধরে নিয়েছিলেন তাকে আইভী অন্তত ফোন দিবেন। তাছাড়া শামীম ওসমানের দেওয়া দুটি শাড়ির একটিও নির্বাচনী প্রচারণায় পড়েনি আইভী। শামীম ওসমান শাড়ি উপহারের সময়ে বলেছিলেন ‘আইভী ভাইয়ের দেওয়া শাড়ি পড়ে প্রচারণায় গেলে মনে করবে এতে ভাইয়ের দোয়া আছে।’
শামীম ওসমানের একাধিক ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইভীকে দেওয়া উপহারের শাড়ি পরিধান না করায় ও ফোন না দেওয়ায় শামীম ওসমান মনে কষ্ট পেয়েছেন। সে কারণেই তিনি আইভীর সঙ্গে দেখা হউক এমন কোন অনুষ্ঠানে যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন। শামীম ওসমান চাচ্ছেন না এখনই তিনি আইভীর মুখোমুখি হন। সে কারণেই ৫ জানুয়ারিও শামীম ওসমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়নি।
এ ব্যাপার সেলিনা হায়াৎ আইভীর বলেন, ‘আজকে আমি সিটি করপোরেশনে কাজ শুরু করেছি। আর এখন এসব নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না। আমি চাই না কোন ইস্যুতে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিক। তাই অহেতুক এসব নিয়ে খোচাখুচি না করাটাই শ্রেয়।’
১০ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম