নিউজ ডেস্ক : পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার জন্য এগিয়ে এলেন মাইক্রোফোনের সামনে। এসময় থামিয়ে দিলেন একেএম শামীম ওসমান, বললেন আমার মাথায় হাত রেখে শপথ করেন ডিএনডির পুরো কাজ শেষ করবেন।
যদি না করেন, তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন। এভাবেই মন্ত্রীকে শপথে বাধ্য করেন স্থানীয় এই সংসদ সদস্য।
রবিবার বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৭নং ওয়ার্ডের কদমতলী নাভানা ভূইয়া সিটি মাঠে অনুষ্ঠিত ডিএনডির মেঘা প্রকল্পের আয়োজিত সমাবেশে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়। এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী উপস্থিত লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, এভাবেই শামীম ওসমান যন্ত্রনা দেন। তার কর্মে আমরা অতিষ্ঠ ও তটস্থ। আপনাদের এ ডিএনডির সমস্যা সমাধানে আমাদের বারবার বিরক্ত করেছেন। কখনও বলেছেন কাজ না হলে ভারত চলে যাবো। আমাকে মেরে ফেলেন। আমি বারবার শামীম ওসমানকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি এ কাজ আমাদের না।
কিন্তু শামীম ওসমান নাছোড় বান্দা। তিনি বলেছেন, এ দুর্ভোগ তো এ দেশের মানুষের। আমাদের পেছনে সে লেগেই ছিলেন। শামীম ওসমান ভালো করে জানেন, কিভাবে নেত্রী ও মন্ত্রীদের কাজ থেকে কাজ বাগিয়ে আনতে হয়।
শামীম ওসমান যোগ্য নেতা উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এই প্রজেক্ট এ শামীম ওসমান ব্যাক্তিগত কোন লাভ নেই। শুধু আপনাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য তিনি আমাদের অফিসে গিয়ে আমাদেরকে স্যারও বলেছেন। শামীম ওসমানের মত এমপি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
এর আগে, দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মলনে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ডিএনডির দায়িত্বটি আমি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে নিতে বলে ছিলাম। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি। ডিএনডি এলাকার অনেক অংশ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশ এলাকায় পড়েছে। বাকিটা পড়েছে এলজিআরডি’র আওতাভুক্ত এলাকায়। ডিএনডি এলাকার ড্রেনেজ এবং সুয়ারেজ সিস্টেম নির্মাণে সিটি করপোরেশনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ডিএনডির ভেতরে মুষ্ঠিমেয় কিছু লোকের জন্য ২০ লাখ লোক ভুক্তভোগী হবে তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। সমস্যা একটাই তা হচ্ছে ডিএনডির ভেতরের বেদখল হয়ে যাওয়া জমিগুলো উদ্ধার করা।
তিনি বলেন, ডিএনডি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে, যাতে কাজের গুণগত মান ভাল হয়। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রী ২০১৯ সালের মধ্যেই প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
সামবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু বলেন, শামীম ওসমান যেমন একরোখা মানুষ, তেমনি আমিও একরোখা। একজন সংসদ সদস্য হয়ে শামীম ওসমান এ ডিএনডিবাসীর জন্য পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। তার বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানি সম্পদমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কি যেন ইশারা করেন। সেই ইশারার পরেই সব কাজ হয়ে যায়। শামীম ওসমান প্রধানমন্ত্রীর ইশারা বোঝেন। তিনি বলেন, সংসদে সাড়ে ৩শ এমপির মধ্যে তুখোড় বক্তা হিসেবে শামীম ওসমান ৮/১০ জনের মধ্যে একজন। কোন কাজ আনার জন্য যেভাবে উপস্থাপন প্রয়োজেন, সেটা সব চেয়ে ভালো জানেন তিনি।
বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, কাজ আনার জন্য মাইর খাইতে, পা ধরতে ও পা ভাঙতেও রাজি আছি। কিন্তু কাজ করতেই হবে। তিনি মন্ত্রীদেরকে সকলের সামনে শপথ করান, এ কাজ সময় মতো শেষ করতে হবে। এসময় নাসিকের ১৩ জন কাউন্সিলরকে মঞ্চের সামনে দাঁড় করিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য সহায়তা করবেন বলে তাদের কাছ থেকে আশ্বাসও এনে দেন তিনি।
প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর আগামী বছর বর্ষায় ডিএনডি এলাকার ভেতরে কোন বাড়িতে পানি দেখতে চান না বলে জোর দাবি জানান শামীম ওসমান।
মতবিনিময় সভায় ও সমাবেশে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহামুদের সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সানজিদা খাতুন এমপি, আবু হেনা বাবলা, অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, বাংলাদেশ জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিুপ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, জাতীয় শ্রমিকলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাষ্টার, নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খালেদ হায়দায় খান কাজলসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস