বরের গাড়ি থেকে সেই নববধূকে ছিনিয়ে নেয়ার কল্পকাহিনী
নারায়ণগঞ্জ : আড়াইহাজারে বরের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেয়া নববধূ সুবর্ণা আক্তারকে ৫২ ঘণ্টা পর উদ্ধার করে র্যাব। এ সময় মূলহোতা আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে মোফাজ্জল হোসেন ও তার ২ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে গাজীপুরের কালীগঞ্জের জামালপুর মীরপাড়া এলাকা থেকে নববধূকে উদ্ধার ও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত র্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রাম থেকে শুক্রবার রাতে বরের গাড়ি গতিরোধ করে সন্ত্রাসীরা বরের কাছ থেকে নববধূ সুবর্ণা আক্তারকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর র্যাব-১১ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নববধূকে উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে।
র্যাব-১১ এর সিপিএসসির সহকারী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, নরসিংদীর পলাশ, গাজীপুরের কালিগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালায়।
র্যাব আরও জানায়, নববধূ সুবর্ণার বড়ভাই নাদিম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘটনার মূল নায়ক মোফাজ্জল হোসেনের মোবাইল ফোনে কৌশলে যোগাযোগ রক্ষা করে তার বোনকে এক নজর দেখার জন্য অনুরোধ জানায়। তখন মোফাজ্জল হোসেন সুবর্ণার বড়ভাই নাদিমকে নরসিংদী জেলার পলাশ থানাধীন বাসস্ট্যান্ডে যেতে বলেন। সেখানে নাদিমকে নিয়ে র্যাব ওত পেতে থাকে। কিন্তু আসামিরা বার বার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে।
র্যাব জানায়, একপর্যায়ে আসামিরা নাদিমকে নরসিংদীর পলাশ থানাধীন জামালপুর গুদারাঘাটে যাওয়ার জন্য বলে। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া র্যাব সদস্যরা মোফাজ্জলের সহযোগী সুজনকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে।
সুজন র্যাবকে জানায়, তার এক ধর্ম নানির বাড়িতে রয়েছে মোফাজ্জল ও নববধূ। কিন্তু গুদারাঘাট পার হয়ে ওই এলাকায় যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় এবং এলাকাটি র্যাব-১ এর এরিয়া। তাই র্যাব-১১এর টিম ঘোড়াশাল ঘুরে ওই এলাকায় যায় এবং র্যাব-১ এর অনুমতি নিয়ে রোববার রাতে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন জামালপুর মীরপাড়ার জনৈক সামছুল হকের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে দোচালা একটি মাটির ঘর থেকে নববধূকে উদ্ধার এবং মূল হোতা মোফাজ্জল হোসেন ও তার সহযোগী রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা স্থান পরিবর্তন করে।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে ওই বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তাদের কাছ থেকে নববধূর গলার স্বর্ণের হার, কানের দুল, টিকলি, হাতের চুড়ি ও নাকের নোলক উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও অপহরণের ঘটনায় ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল ফোন, নগদ ১৫ হাজার ৫৩৪ টাকা উদ্ধার করে।
র্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার লতিফ খান জানান, মোফাজ্জাল হোসেন বিভিন্ন সময় তাকে উত্ত্যক্ত করতো। তার অতীত ভালো না। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ-বৈঠক হয়েছে। মোফাজ্জলের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় গত মাসের ৫ অক্টোবর একটি মামলা হয়। মামলা নং-৩।
শুক্রবার বরের গাড়ি থেকে মোফাজ্জল হোসেন ও তার সহযোগীরা তাকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
তিনি জানান, নববধূকে ছিনিয়ে নেয়ার পরপর তার নাকে কিছু একটা দিয়ে দেয় আসামিরা। এতে নববধূর স্বাভাবিক জ্ঞান ছিল না। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় আইনি প্রক্রিয়ার জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে ঘটনার মূলহোতা মোফাজ্জল হোসেন জানায়, তার সঙ্গে সুবর্ণার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে নববধূ জানায়, তার সঙ্গে মোফাজ্জলের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
মোফাজ্জল হোসেন উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাতেম আলীর ছেলে। ওদিকে একমাত্র মেয়েকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নববধূর বাবা আবদুল লতিফ।
র্যাব কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত ঈদুল আজহার দিন নামাজ পড়া নিয়ে মোফাজ্জল গংদের নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে তার ছেলে আশিক (১৭) ও বন্ধু কাউসারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। খবর পেয়ে ছেলেকে রক্ষা করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকেও কুপিয়ে আহত করে। এ সময় জামা খুলে তিনি তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন সাংবাদিকদের দেখান।
এ ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আবদুল লতিফ। মামলা দায়েরের পর থেকেই সন্ত্রাসীরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন জানান, উদ্ধার হওয়া নববধূর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হবে এবং গ্রেপ্তারকৃত ৩ আসামিকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রয়োজনে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
উল্লেখ্য, আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগাঁও চৌধুরী বাড়ির আ. লতিফের মেয়ে সুবর্ণা আক্তারের সঙ্গে গত ৯ অক্টোবর রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর পুটিয়া গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে নাদিমের কাবিন হয়।
৬ নভেম্বর শুক্রবার ছিল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সন্ধ্যায় বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে নববধূ সুবর্ণাকে নিয়ে প্রাইভেট কার যোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় বর নাদিম ও তার স্বজনরা। বর-কনেকে বহনকারী প্রাইভেট কারটি উপজেলার রসুলপুর নামক স্থানে গেলে দুইটি সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে বরের গাড়ি গতিরোধ করে মোফাজ্জল গংরা।
বরযাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বর নাদিমসহ তার সহযাত্রীদের পিটিয়ে নববধূ সুবর্ণাকে জোর করে সিএনজিতে তুলে মাধবদীর দিকে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। -এমজমিন
১০ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর