নারায়ণগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বাড়ৈপাড়া এলাকায় হৃদয় (৯) নামে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।
অনৈতিক কর্মকান্ড দেখে ফেলায় শুক্রবার ভোরে ওই শিশুর মা নিজেই তাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এবার বেরিয়ে এলো সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যার ভয়ংকর সব তথ্য।
সে স্থানীয় ৩৫ নং বাড়ৈপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং প্রবাসি আনোয়ারের ছেলে। মায়ের দেওয়া আগুনে একই সময় জিহাদ (৫) নামে অপর শিশু সন্তানও ঝলসে গেছে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে। মা শেফালীকে আটক করা হয়েছে। তার বাবার বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে ।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বাড়ৈপাড়া এলাকার জয়নাল আবেদীন জানান, নিহত হৃদয় ৩৫নং বাড়ৈপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। প্রায় ১১ বছর আগে শেফালীর সাথে স্থানীয় বিল্লাল টৈইলারের ছেলে আনোয়ার হোসেনের বিয়ে হয়।
জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন ধরেই আনোয়ার হোসেন মালয়েশিয়া প্রবাসি। উচিৎপুরা ইউনিয়নের বাড়ৈপাড়া এলাকায়গ শ্বশুরবাড়িতেই দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন শেফালী। এরই মধ্যে স্থানীয় বিল্লালের ছেলে মোমনের সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।
ঘটনার দিন রাতে মোমেন তার ঘরে অবস্থান করছিল। এসময় মায়ের সাথে অন্যপুরুষের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি দেখে ফেলায় ঘুমের বড়ি সেবন করিয়ে ঘুমন্ত শিশুদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় ঘটনাস্থলেই হৃদয় মারা যায়।
এসময় পাশেই ঘুমিয়ে থাকা শিশু জিহাদও ঝলসে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ( ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার শ্রী উত্তম জানান, শিশু জিহাদের ১ হাত ও দু পা ঝলসে গেছে। তাকে বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় যুবক রিপন জানান, মোমেনের সাথে শেফালীর দীর্ঘদিন ধরেই অনৈতিক সম্পর্কের কারনে তার প্রবাসী স্বামী তাকে ডির্ভোস দিয়ে দেন। কিন্তু এর পরও সে সন্তানদের নিয়ে এখানেই বসবাস করতে থাকেন। ঘটনার দিন রাতে মোমেন তার ঘরেই ছিল।
ওসি এম এ হক জানান, প্রায় ১১ বছর আগে বাড়ৈপাড়ার বিল্লালের ছেলে প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কেরানীগঞ্জের সুন্দর আলীর মেয়ে শেফালীর বিয়ে হয়। পরে তাদের দুই ছেলের জন্ম হয়।
তিনি জানান, আনোয়ার বিদেশে থাকার সময় পার্শ্ববর্তী মোমেনের সঙ্গে পরকীয়া জড়িয়ে পড়েন শেফালী। এ নিয়ে আনোয়ার তিন মাস আসে শেফালীর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কিন্তু শেফালী বিষয়টি না মেনে শ্বশুর বাড়িতেই থাকছিলেন।
ওসি জানান, স্বামীর প্রতি প্রতিশোধ নিতে শুক্রবার গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় দুই সন্তান হৃদয় ও শিহাবকে কাঁথায় জড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। এতে হৃদয়ের পুরো শরীর দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয় সে।
আরেক সন্তান অগ্নিদগ্ধ শিহাবকে (৭) উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। পরে মা শেফালীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসীরা।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস