নিউজ ডেস্ক : ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার, মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার ……ছেলের আবার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম, আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম। নচিকেতার এই গানের কথা যে কোনো বাঙালি হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। জীবনের সন্ধিক্ষণে বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব আর অবহেলার কথাই ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। নচিকেতার এই মর্মস্পর্শী গান নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া বেইলি টাওয়ারের সামনে যেন ছড়িয়ে পড়লো।
পড়ে গিয়ে পা ভেঙে গেছে বৃদ্ধা মায়ের। পায়ের যন্ত্রণায় কাতর তিনি। গ্রাম থেকে শহরে এসেছে চিকিৎসা করাবে। দুই ছেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া এলাকায় ফ্লাটে থাকেন। অসুস্থ বৃদ্ধা ছেলেদের ফ্লাটের সামনে এসে পড়েছেন বিপাকে। অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে পালাচ্ছিলো দুই ছেলে! দুই ছেলে সিরাজুল আর মনির কেউই নিতে চাচ্ছে না বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব। গ্রাম থেকে আসা অসুস্থ মাকে দুই ভাইয়ের কেউই বাসা পর্যন্ত নিতে রাজি না। এ নিয়ে চাষাড়া বেইলি টাওয়ারের সামনে দুই ভাইয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া।
রাস্তার ওপর গত সোমবার দুপুরে এমন ঝড়গা দেখে জড়ো হতে থাকে উৎসুক জনতা। বৃদ্ধা মায়ের দায়িত্ব নিতে উপস্থিত লোকজন দুই ভাইয়ের কাছে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা কেউই রাজি না। মাকে রাস্তায় ফেলে চলে যাবে ছেলেরা এমন সময় আর্বিভাব হলেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-২) সাজ্জাদ রোমন। ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
পুলিশের এ পরিদর্শক দুই ভাইকে শাসিয়ে এক্ষুণি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন বৃদ্ধা মাকে। নিজেই সিএনজি ডেকে বৃদ্ধাকে ধরে তোলেন রোমন। সিএনজি ভাড়াও পরিশোধ করে দেন। এর আগে বৃদ্ধাকে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার বাড়ির ঠিকানাও টুকে নেন। বৃদ্ধার ছেলেদের ডেকে বলেন, মায়ের কোনো অযত্ন-অবহেলা যাতে না হয়। বৃদ্ধাকে বলে দেন, যদি ছেলেরা তার দায়িত্ব না নেন সেটি যাতে তিনি মুঠোফোনে তাকে (রোমন) জানান।
জানা গেছে, হতভাগ্য বৃদ্ধার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি থানার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের গোনাইসার গ্রামে। তার দুই ছেলে সিরাজুল ও মনির চাষাড়া বিলাসবহুল ফ্লাটে থকে।
সাজ্জাদ রোমন জানান, ওই বৃদ্ধা মায়ের দুই ছেলেকে ডেকে বলেছি। এক্ষুণি যদি তারা মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করেন তবে তাদের গ্রেফতার করা হবে। পরে তারা আমার কথা শুনেছে।