শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:১৫:৩৪

বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদ, বিকট শব্দে উড়ে গেছে দরজা জানালা

বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদ, বিকট শব্দে উড়ে গেছে দরজা জানালা

নারায়ণগঞ্জ : হঠাৎ বিকট শব্দ, উড়ে গেছে দরজা জানালা, ধসে পড়েছে দেয়াল। তারপরই শোনা যায় মানুষের কান্না, আর্তনাদ। একে একে নারী ও শিশুসহ সবাই দৌড়ে বেরোচ্ছেন। সবার শরীরে আগুন। প্রাণে বাঁচতে পাশের ময়লা পানিতে শুয়ে পড়েন অনেকে। পরে তাদের উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। ফতুল্লার তল্লার একটি ফ্ল্যাট বাসার তৃতীয় তলায় গ্যাস বিস্ফোরণের এমন বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী গার্মেন্টস কর্মী চিত্তরঞ্জন দাস।

তিনি জানান, ভোর ৬টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে দেখি শরীর আগুন নিয়ে রুম থেকে একের পর এক বের হচ্ছে তারা। বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদ। পরে তারা গিয়ে পাশের ময়লা পানিতে শুয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল ওয়াহেদ নয়া দিগন্তকে জানান, বিকট শব্দের বিস্ফোরণ। পরে বাহিরে গিয়ে দেখি দেয়াল ধসে পড়েছে। গ্যাসের পাইপে আগুন জ্বলছে। তিন তলা থেকে মানুষ শরীরে আগুন নিয়ে ছুটে আসছে।

ভোর ছয়টার দিকে স্থানীয় মডেল গার্মেন্টসের দক্ষিণ পাশে মফিজুল ইসলামের তিন তলা বাড়ির ৩য় তলার ভাড়াটের ফ্ল্যাট বাসায় এই গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ঘরের দুইটি দেয়াল ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণে কয়েকজন নারী ও এক শিশুসহ দুই পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন।

দগ্ধদের মধ্যে ৫ জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি ৬ জনকে সদর জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি দগ্ধরা হলেন, মো. হাবিবুর (৪০), তার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩৮), তার ছেলে লিমন (১৭), মেয়ে মিম (১৮), তিন মাসের শিশু মাহিরা। দগ্ধ অন্যরা হলেন মো. সোনাহার (৪০), শান্তি আক্তার (৩০), সামিউল (২৫), মনোয়ারা (২২) ও সাথী (২৫)। অপর একজনের নাম জানা যায়নি। আহত লোকজনের বেশির ভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মফিজুল ইসলামের বাড়ির তৃতীয় তলায় পোশাক কারখানায় কাজ করা ২টি পরিবার বাস করেন। রাতে চুলায় গ্যাসের চাপ না থাকায় একটি পরিবারের লোকজন চুলার বার্ণার বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন। এতে চুলা থেকে গ্যাস বের হয়ে রান্নাঘরসহ অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে জমাট বেঁধে থাকে। ভোরে রান্নার জন্য চুলায় আগুন জ্বালালে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বিকট শব্দ হয়ে ঘরে আগুন ধরে যায় এবং কক্ষের দরজাসহ দুইটি দেয়াল ধসে পড়ে। বিকট শব্দ পেয়ে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করেন। পরে চিকিৎসার জন্য ৫ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ও ৬ জনকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক সাজু বেগম বলেন, তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলার ডান পাশের ফ্ল্যাটের দুটি কক্ষে মো. হাবিবুর ও মো. সোনাহার নামের দুই পরিবারের ১১ জন থাকতেন। ভোরে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণে তৃতীয় তলার দেয়াল ভেঙে নিচে পড়ে যায়। আগুনের তাপ ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তাপে সবগুলো ফ্ল্যাটের দরজা ও জানালা ভেঙে গেছে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, রাতে গ্যাসের চুলার বার্ণার বন্ধ না করায় চুলা থেকে গ্যাস বের হয়ে রান্নাঘরসহ অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে জমাট বেঁধে থাকে। ভোরে রান্নার জন্য চূলায় আগুন জ্বালালে গ্যাসের পাইপ লাইনের বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় তিন মাস বয়সের একটি শিশুসহ ছয়জন নারী ও চারজন পুরুষ আগুনে দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে শিশুটিসহ পাঁচজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয় এবং ছয়জনকে সদরের জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে