নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ঘটনার দিন আমার কথা না শুনেই আমার দু’গালে থাপ্পড় মেরেছেন। তার কথায় আমি কান ধরে ওঠবস করি। তাকে বরখাস্তসহ গ্রেফতারের দাবি করেছেন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি।
শ্যামল কান্তি বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করিনি। উনি পলিটিক্যাল লিডার। নিজেকে সেভ করার জন্য কত কিছুই বলতে পারেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের ৩য় তলার হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে সেলিম ওসমান বলেছেন, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি সংসদে যাব না। এমনকি বিকেএমইএ ও চেম্বার অব কমার্সের দায়িত্ব থেকে দূরে সরে গেলাম। যদি তদন্তে আমি দোষী প্রমাণিত হই তাহলে সংসদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি নেব।
তিনি বলেন, মুসলমান ও আল্লাহ রাসুলকে নিয়ে কটূক্তি করায় তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আমি একজন মুসলমান হয়ে তাকে শাস্তি দিতে পেরে কৃতজ্ঞতাবোধ করছি।
সেলিম ওসমান বলেন, আল্লাহ ও নবীজিকে নিয়ে কটূক্তি করা এবং জনগণের রোষানল থেকে বাঁচাতে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সে নিজের ভুল স্বীকার কান ধরে ওঠবস করতে সম্মত হওয়ায় জনগণের সামনে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র তার জীবন রক্ষার জন্যই এ কাজ আমাকে করতে হয়েছে। এটা করে আমি কোনো অন্যায় করিনি। প্রধান শিক্ষকের জীবন রক্ষা করায় তার পরিবারের লোকজন আমাকে লিখিতভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানধরে ওঠবস করানোর প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তারা মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে তারা বলেন, শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানধরে ওঠবস করানোর সময় উপস্থিত জনতা জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছিল। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। আজকে শিক্ষককে অপদস্ত করে জয় বাংলা স্লোগান দেয়া হচ্ছে। জয় বাংলা স্লোগান কি শিক্ষক অপমানের জন্য?
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার নৈতিক অধিকার তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। তার রাজনীতি করার অধিকার নেই। এ দেশে থাকার অধিকারও নেই তার।
এ সময় তিনি সংসদ থেকে সেলিম ওসমানকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য স্পিকার এবং জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কারের জন্য আহ্বান জানান।
তবে সেলিম ওসমানের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন শ্যামল কান্তি ভক্ত। তিনি বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে সেলিম ওসমান আমার কক্ষে আসেন। তখন আমি চেয়ারের হাতলে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। তিনি ভেতরে প্রবেশ করার পর আমি তাকে সালাম দিয়ে শুধু ‘স্যার’ বলতে পেরেছিলাম।
শ্যামল কান্তি ভক্ত বলেন, তিনি ভেতরে প্রবেশ করে আমার কোনো কথা না শুনে দু’হাত দিয়ে আমার দুই গালে চারটি থাপ্পড় মারেন। পরে আমাকে বাইরে এনে গালাগালি করে বলেন, কান ধর, ১০ বার কান ধরে ওঠবস করবি।
তিনি বলেন, আমি কয়েকবার কান ধরে ওঠবস করার পরই পড়ে যাই। পরে আমাকে হাত ধরে ওঠানোর পর এমপি মাফ চাইতে বলেন। আমি মাফ চাইলে আমাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আমাকে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যায়।
শ্যামল কান্তি বলেন, আমি তার কাছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কথা স্বীকার করিনি। এটি মিথ্যা কথা। যদি তার কাছে কোনো প্রমাণ থেকে থাকে তাহলে আমাদের দেখান।
থাপ্পড় মারার বিষয়টি কেন আগে সাংবাদিকদের বলা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন আমি ভয়ে বলিনি। তিনি আমাকে বলেছেন, আপনি আমাকে সেভ করেন আমিও আপনাকে সেভ করব।
তিনি বলেন, আমাকে সেলিম ওসমানের এক লোক প্রলোভন দেখান বাইরে পাঠানোর জন্য। তিনি আমাকে বারবার কল করে বলেছেন, যত সুযোগ-সুবিধা চান আপনাকে দেয়া হবে। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বাইরে পাঠানো হবে।
শ্যামল কান্তি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি এখন সেলিম ওসমান আতঙ্কে আছি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। থানা প্রশাসন সবই এমপির হাতে। আমি তার বরখাস্ত ও গ্রেফতার দাবি করছি।
১৯ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম