তানভীর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে ২০০১ সালের ১৬ জুন বোমা হামলার ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ওই সময়ের সাংসদ শামীম ওসমানের কক্ষে তিনজন ব্যক্তি প্রবেশ করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ওবায়দুল্লাহ হক ওবায়দুল। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভিসা আবেদন ফরমে সুপারিশের জন্য গিয়েছিলেন তিনি। শামীম সুপারিশ করতে অস্বীকার করায় জোরে টেবিল চাপড়েছিলেন। বিস্ফোরণের পেছনে দায়ী হিসাবে সেই ওবায়দুলকেই সন্দেহ করছেন শামীম ওসমান।
বুধবার বিকেলে শামীম ওসমান বেশ আক্ষেপ নিয়েই বলেন, ‘তদন্ত নিয়ে আমি আশাহত, দুঃখিত, ব্যথিত। মূলত যিনি এ ঘটনার (বোমা হামলা) নায়ক সেই ওবায়দুল্লাহর স্মৃতি আমাদের চোখে ভাসে। আমি বারবার বলার পরও তাকে এখান থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি আশা করি না যে আমি এটার কোনও বিচার পাবো।’
তবে তদন্ত সঠিক দাবি করে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কাউকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। চার্জশিটভুক্ত আসামি ওবায়দুল্লাহ দেশেই আছেন এবং আদালতের জিম্মায় আছেন। তিনি আরও দাবি করেন, দেশের বাইরে আছেন শুধু মোরসালিন ও মুত্তাকিম এই দুই ভাই।
সিআইডি কর্মকর্তা এহসানউদ্দিন চৌধুরীকে প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন যা জানিয়েছেন তা অনেকটা এরকম- ২০০১ সালের ১৬ জুন বিকালে চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে এসেছিলেন ওবায়দুল নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি শহরের চাষাঢ়ায় চকলেট ফ্যাক্টরি মোড় এলাকায়। তিনি ও আরও দুই জনসহ মোট তিন জন আওয়ামী লীগ অফিসে এসেছিলেন।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনিসহ দুই জন শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত কক্ষে গিয়ে কথা বলেন। তারা এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য সুপারিশ করতে। তিন জন এলেও মূলে ছিলেন ওবায়দুল। তিনিই মূলত যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে আসেন। শামীম ওসমানের সঙ্গে তিনি কথা বলে ওই কাগজপত্রে সুপারিশ চান। কিন্তু শামীম ওসমান সুপারিশ করতে প্রথমে অনীহা প্রকাশ করেন।
ওই সময়ে ওবায়দুল হঠাৎ করেই শামীম ওসমানের সামনের টেবিল চাপড়ে উঠে বলেন, ‘আমার জন্য কেন সুপারিশ করবে না, দেবে না কেন, আমরা তোমার মহল্লার লোক। আমাদের জন্য না করলে কার জন্য করবে?’
শামীম ওসমান তাকে বলেন, ঢাকার মার্কিন দূতাবাস সাংসদদের সুপারিশে ভিসা দেয় না। এরপরও ওবায়দুল হক সুপারিশের জন্য পিড়াপিড়ি করতে থাকেন।
ওবায়দুলের সঙ্গে আসা দুজনের একজনের হাতে ছিল কালো ব্রিফকেস। দুই যুবক ফটোকপি করা একটি আবদেনপত্রে শামীম ওসমানের সুপারিশসহ সই চান। এর মধ্যে ওবায়দুল হক দ্রুত বেরিয়ে যান। সে সময়ে শামীম ওসমানের প্রভাব ছিল দোর্দণ্ড। শামীম ওসমানের টেবিল চাপড়ে ওবায়দুলের মতো একজন ব্যক্তির আচরণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ওঠেন রুমে থাকা অন্যরা।
ওবায়দুল উত্তেজিত থাকলেও অন্য দুই জন ছিলেন বেশ নীরব। তারা বসে শুধু ঘটনা দেখেছেন। টেবিল চাপড়ানো ওবায়দুলকে পুলিশ পরে গ্রেফতার করলেও বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। তিনি পুরান ঢাকা এলাকায় বাস করেন।
ওবায়দুলের সঙ্গে আসা দু’জন ছিলেন মোরসালিন ও মুত্তাকিম। ২০০৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি রেলস্টেশন থেকে হরকাতুল জিহাদের জঙ্গি সন্দেহে এই দুই সহোদর আনিসুল মোরসালিন ও মুহিবুল মুত্তাকিনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়। তারাও বোমা হামলার ঘটনা স্বীকার করেছেন এবং বর্তমানে দিল্লি কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি নারায়ণগঞ্জ অফিসের সহকারী পুলিশ সুপার এহসান উদ্দীন চৌধুরী জানান, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৬ জুন রাতে মোরসালিন ও মুত্তাকিম একটি ব্রিফকেস হাতে নিয়ে চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে আনা ব্রিফকেসটিতেই বোমা রাখা ছিল। তবে এটা টাইম বোমা নাকি রিমোট কন্ট্রোল বোমা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বোমা হামলায় মুফতি আবদুল হান্নান ও ওবায়দুল্লাহও জড়িত ছিলেন। -বাংলা ট্রিবিউন
১৬ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস