বুধবার, ০৩ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৫৭:৫২

বিলাপ করছেন মেয়ে, ‘আব্বা তো মাদক ব্যবসায়ী না, পানের দোকানদার’

বিলাপ করছেন মেয়ে, ‘আব্বা তো মাদক ব্যবসায়ী না, পানের দোকানদার’

নারায়ণগঞ্জ : ‘আমার আব্বা তো মাদক ব্যবসায়ী না, পানের দোকানদার।  বাজার যাওয়ার পথে পুলের পাশে একটা দোকানে তিনি পান বিক্রি করেন।  পুলিশ আমার আব্বারে মাইরা ফালাইছে।  আমার আব্বা নির্দোষ।’

বুধবার সন্ধ্যায় সোনারগাঁওয়ের রাইজদিয়ায় পুলিশের ধাওয়ায় পানিতে ডুবে নিহত আব্দুল মতিনের (৪৫) বড় মেয়ে শিউলি আক্তার এভাবেই বিলাপ করছিলেন।

আবদুল মতিন সোনারগাঁও পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের রাইজদিয়া গ্রামের মোছলেহ উদ্দিনের ছেলে।  তিনি পানাম নগরী পুল এলাকার পানের দোকানদার ছিলেন।

শিউলি আক্তার বলেন, আব্বা-আম্মা একসঙ্গে বিকেলে আমাদের বাড়ির পাশে একটি খড়ের স্তূপ থেকে গরুর জন্য খড় আনতে যায়।  তখন একটি মোটরসাইকেলে করে সাদা পোশাকে দুজন আব্বাকে বলে- হাতের ব্যাগে কি? মাদক আছে নাকি? এ কথা বলে আব্বাকে ধাওয়া দেয় তারা।

তিনি বলেন, আব্বা ভয়ে দৌড়ে পাশের একটি পুকুরে পড়ে যায়।  ওই সময় দুজনের একজন নৌকায় করে পুকুরে মাঝে গিয়ে লাঠি দিয়ে আব্বাকে মারতে থাকে।  এলাকার লোকজন এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইট-পাটকেল দিয়ে ঢিল দিতে থাকে।  সেখান থেকে তুলে আব্বাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।   

লাশ বাড়িতে নিয়ে আসলে রাত পৌনে ৮টায় পুলিশ এসে লাশ নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় আব্দুল মতিন (৪৫) মারা গেলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে ধাওয়াকারী পুলিশ সদস্য আরিফুর রহমানও (৩৫) নিহত হন।

পুলিশের দাবি, আব্দুল মতিন একজন মাদক ব্যবসায়ী।  তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে দৌড়ে গিয়ে পুকুরে ডুবে মারা যায়।   

এ ব্যাপারে সোনারগাঁও পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর জায়েদা আক্তার মনি বলেন, আমি যতটুকু জানি মতিন পানের দোকানদারি করতেন। মুরগির ব্যবসাও করতেন।  তার বউ গরু পালে।  তিনটা মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।  কখনো তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ শুনিনি।

অন্যদিকে সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের বলেন, আবদুল মতিনের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।  বিকেলে এএসআই ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সোনারগাঁও পৌরসভার রাইজদিয়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী আবদুল মতিনকে ধরতে অভিযান চালায়।  

তিনি বলেন, ওই সময় আবদুল মতিন দৌড়ে পালাতে গিয়ে একটি পুকুরে পড়ে যায়।  তখন তাকে ধরতে পুলিশের কনস্টেবল আরিফুর রহমানও পুকুরে যায়।  পুকুরে ডুবে আবদুল মতিনের মৃত্যু হয়েছে। পরে আরিফুর রহমান তীরে উঠার সময়ে এলাকার লোকজন ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে।  তাকে পিটুনিও দেয় লোকজন।  এতে আরিফুর মারা যায়।
৩ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে