সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:০৫:০৩

হৃদয় বিদারক 'খুশির খবর'!

হৃদয় বিদারক 'খুশির খবর'!

নেত্রকোনা : হতদরিদ্র বাবা-মা ছেলেকে চিরনিদ্রায় শুইয়ে রেখে এসেছেন গত শনিবার সন্ধ্যায়। রাত পেরোতেই জীর্ণ ঘরটিতে এলো 'খুশির' খবর। এই 'খুশি'ই এখন পরিবারটিকে কুরে কুরে খাচ্ছে। হৃদয় বিদীর্ণ করা এই 'খুশির খবর' হলো গত শুক্রবার খুন হওয়া মজিদ এসএসসি পাস করেছে।


গত শুক্রবার পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় খুন হয় আবদুল মজিদ। সে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সান্দিকোনা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (স্কুল অ্যান্ড কলেজ) থেকে এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। রোববার ফল প্রকাশের পর দেখা যায় সে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৩ দশমিক ৪২ পেয়েছে।

উপজেলার দ্বিপাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিন রিকশা চালিয়ে তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচজনের সংসারের খরচ চালাচ্ছিলেন। বাবার কষ্ট দেখে মজিদ নিজে দিনমজুরের কাজ করে নিজের খরচ জোগাত। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে বড় হবে, সংসারের হাল ধরবে। শুধু নিজেই না, ছোট ভাইকেও পড়াশোনা করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাত। অথচ তার স্বপ্ন স্বপনই রয়ে গেল।

জালালউদ্দিনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের মোবাইলে কথা হয়। ফোনে জালাল উদ্দিন আমার ছেলে পাস করছে, আমার ছেলে পাস করছে বলে বিলাপ করতে থাকেন। কণ্ঠ জড়িয়ে আসায় তিনি আর কথা বলতে পারছিলেন না। পাশেই ছিল মজিদের মেজ ভাই আবদুল্লাহ মিয়া। ফোনটি বাবার কাছ থেকে নিয়ে নেয় সে। সবার ছোট ভাইটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ে।

আবদুল্লাহ সিলেট সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে বলে, রিকশা চালিয়ে বাবা অনেক কষ্টে আমাদের তিন ভাইকে পড়াচ্ছিলেন। বড় ভাই এবার এইচএসসি পাস করেছে। কিন্তু ভাই সেই ফল দেখে যেতে পারলেন না। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে। আমাকে নিয়ে ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। কষ্টের সংসারে এখন আমি কীভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাব তা বুঝতে পারছি না।

সান্দিকোনা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, এবার ফলাফল বিপর্যয়ের মধ্যেও আবদুল মজিদ ৩ দশমিক ৪২ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছে। আজ মজিদ বেঁচে থাকলে কী যে খুশি হতো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ঘাতকেরা সেই ফলাফল তাঁকে দেখে যেতে দিল না। তবে মজিদের ঘাতককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এটাই এখন সকলের চাওয়া।
১০ আগস্ট ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে