শনিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, ০১:০১:১৫

‘৯৯৯’ এ ফোন করে বাল্য বিয়ে বন্ধ করায় মাদ্রাসা শিক্ষক ও ইমামকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

‘৯৯৯’ এ ফোন করে বাল্য বিয়ে বন্ধ করায় মাদ্রাসা শিক্ষক ও ইমামকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

নোয়াখালী: আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাদ্রাসা শিক্ষক তারিকুল মাওলাজাতীয় হেল্পলাইন ‘৯৯৯’ এ ফোন করে তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করায় এক মাদ্রাসা শিক্ষক ও মসজিদের ইমামকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

গত মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হাতিয়ার দুর্গম চর ১নং হরণি ইউনিয়নের পূর্ব রসুলপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষক তারিকুল মাওলাকে গত বুধবার (৩০ জানুয়ারি) নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং আহত ইমাম মিনহাজুল ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

তারিকুল মাওলা হাতিয়া পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের মৃত কামাল উদ্দিনের ছেলে এবং মিনহাজুল ইসলাম ১নং হরণি ইউনিয়নের পূর্ব রহমত গ্রামের মো. মোস্তফার ছেলে।

মাদ্রাসা শিক্ষক তারিকুল মাওলা জানান, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের  প্রত্যেক উপজেলায় দু’টি করে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপন করেন। তার একটি হাতিয়ার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ১নং হরণি ইউনিয়নের পূর্ব রসুলপুরে স্থাপন করা হয়। দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় তিনি শিক্ষকতা করেন। তার মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী পূর্ব রসুলপুর গ্রামের ১৩ বছর বয়সী এক মেয়ের সঙ্গে স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে বিবাহের আয়োজন করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ওই দিন (২৯ জানুয়ারি) তিনি ন্যাশনাল হেল্পলাইন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ-আলমকে এই কথা জানান। নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে মেয়েটির বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, ‘ওই দিন বিকালে স্থানীয় পূর্ব রসুলপুর জামে মসজিদের ইমাম মিনহাজুল ইসলামের সঙ্গে আমি হাতিয়া বাজারে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় পূর্ব রসুল গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে আবদুল কাদের, আবদুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ আলী মহব্বত, আবদুল জিলানীর ছেলে এনায়েত হোসেন বেচু, সমির উদ্দিন, বাবলু ও কালামসহ ১০-১২ জন সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা আমাদের দুই জনকে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। পরে আমাদের সঙ্গে থাকা ৩টি মোবাইল ফোন, ১টি টর্চ লাইট, ৫৩০০ টাকা, একটি ভিসা কার্ড, মাদ্রাসার শিক্ষক পরিচিতি কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যায়। পাশাপাশি আমাদের কাছ থেকে জোর করে তিনটি স্ট্যাম্প ও দুটি নীল কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরে আহত অবস্থায় স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।’ 

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ-আলম জানান, ‘১নং হরণি ইউনিয়নের পূর্ব রসুলপুরের দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক তারিকুল মাওলা একই এলাকার ১৩ বছরের কিশোরীর বাল্য বিয়ের কথা জানালে তাৎক্ষণিকভাবে তা বন্ধ করা হয়। এই ঘটনার জেরে পরবর্তিতে নির্যাতনের শিকার হওয়া তারিকুল মাওলাকে হাতিয়া থানায় মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে।’

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শিকদার বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হওয়া তারিকুল মাওলাকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলেছি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে