বুধবার, ০৯ মার্চ, ২০১৬, ১১:৫৩:৪৩

হাতিয়ায় আ.লীগের দু’ গ্রুপ মুখোমুখি, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা

হাতিয়ায় আ.লীগের দু’ গ্রুপ মুখোমুখি, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা

আরাফাতুর রহমান, নোয়াখালী প্রতিনিধি: আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার ৭ টি ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। যেকোন সময় এ দু’ গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে হাতিয়া উপজেলাবাসী। সরকার দলীয় এ দু’ গ্রুপের মধ্যে ধারাবাহিক হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনার ঘটনা ঘটেই চলছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত ৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সংঘঠিত হামলায় ২ জন গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। হাতিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ সকল সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দমনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এতে করে হাতিয়া উপজেলা বাসীর মাঝে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেখা দিয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রোববার বেলা ২ টার সময় চর কিং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ মোঃ মহি উদ্দিনের সমর্থকরা মজহর উদ্দিন গ্রামে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মহি উদ্দিন প্রকাশ মুহিনের বসত বাড়িতে হামলা করে বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনার পর বিদ্রোহী প্রার্থী মুহিনের লোকজন পাল্টা হামলা চালায়।
এ সময় সংঘর্ষে ও গোলাগুলির ঘটনায় মহিনের পিতা আমির হোসেন (৬০) ও তার ছোট ভাই হৃদয় (১৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আহতদেরকে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ২০ জন আহত হন।
বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ¦ মহি উদ্দিন সমকালকে বলেন, শনিবার দুপুরে স্থানীয় জনতা বাজারে তার এক কর্মী সমর্থককে মুহিনের লোকজন অহেতুক মারধর করায় স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালায়। এর আগে শনিবার রাতে বিদ্রোহী প্রার্থী মুহিনের লোকজন হাতিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ওয়ালী উল্যাহর চর কৈলাশ এলাকার বাস ভবনে ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সাইফুদ্দিনের বসত বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। খবর পেয়ে হাতিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৩০-৪০ রাউনন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। ওই সংঘর্ষ হামলায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।
এছাড়া শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার সময় নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মেহরাজ উদ্দিনের নির্বাচনি প্রচারনার সময় স্থানীয় নামার বাজার এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ও তার সমর্থকরা প্রচারনার মাইক কেড়ে নিয়ে তা ভাংচুর করে। এ ঘটনার জের ধরে সরকার দলীয় প্রার্থী বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৩০ জন আহত হয়। একই দিন সন্ধ্যা ৭ টার সময় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আলা উদ্দিন আজাদ চর ঈশ^র ইউনিয়নের বাংলা বাজার নামক স্থানে নির্বাচনি অফিস উদ্ভোধন ও সভা করতে গেলে বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ও তার সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে অফিস ও ৩০-৪০ টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ২৫ জন আহত হয়। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত হাতিয়ার তমরুদ্দি, চর কিং, সোনাদিয়া, জাহাজমারা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে অর্ধশত (৫০ জন) আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন সময় সরকার দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য ও হাতিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যাপক ওয়ালী উল্যাহ ও হাতিয়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সাইফুদ্দিনের সঙ্গে কথা বললে তারা সমকালকে বলেন, আগামী ২২ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য হাতিয়া উপজেলার ইউপি নির্বাচনে সন্ত্রাসীদের ঘটফাদার ও হাতিয়া বনদস্যু-জলদস্যুদে আশ্রয়-প্রশ্রয় দানকারী মোহাম্মদ আলীর কর্মি-সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারনে তার আশির্বাদ পুষ্ট লোকজন ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিক না পেয়ে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামীলীগের নির্দেশ অমান্য করে প্রত্যেক ইউনিয়নে নৌকার প্রতীক প্রার্থীদের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী দাড় করিয়েছে। যারা হাতিয়া এলাকায় বনদস্যু, ভূমিদস্যু ও জলদস্যু হিসেবে পরিচিত। এতে করে জননেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীক প্রার্থীদের বিজয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁিড়য়েছে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, হাতিয়া উপজেলায় আওয়ামীলীগের বৈধ কোন কমিটি নেই। আওয়ামীলীগ নাধারি যারা আছেন তারা জনবিচ্ছিন্ন। ওই সকল জনবিচ্ছিন্ন নেতা ও কর্মীরা আমার ও আমার স্ত্রী হাতিয়ার বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস এর জনপ্রিতায় ইর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা  মিথ্যাচার করছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী সদর সার্কেলের সিনিয়র নব জ্যোতি খীসা ও হাতিয়া থানার ওসি এটি এম আরিছুল হক বলেন, সাবেক সংসদ মোহাম্মদ আলী ও আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট সাইফুদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বোরবার বিকেল পর্যন্ত দফায় সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনায় ১ পুলিশ আহত ও ২ জন গুলিবিদ্ধসহ বেশ কিছু লোক আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে বর্তমানে সদর সার্কেলের এ এস পির নেতৃত্ব জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিট্রেট নজরুল ইসলাম ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক আতাউর রহমানসহ অতিরিক্ত পুলিশ হাতিয়ায় অবস্থান করছে।
উল্লেখ আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য হাতিয়া উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের নির্বাচনে প্রত্যেকটিতেই আওয়ামীলীগৈর বিদ্র্রোহী চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে প্রার্থী রয়েছে।
৯ মার্চ, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে