রবিবার, ২২ মে, ২০১৬, ০১:৫২:১৯

নোয়াখালী ইউনিয়ন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের শঙ্কা

 নোয়াখালী ইউনিয়ন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের শঙ্কা

আরাফাতুর রহমান, নোয়াখালী প্রতিনিধি:নোয়াখালী’র বেগমগঞ্জ উপজেলায় ২৮ মে নির্বাচন। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানায়, ১৬ ইউনিয়নে কেন্দ্র ১৮৯, চেয়ারম্যান প্রার্থী ৭৬ জনের মধ্যে আ’লীগ ১৬, আ’লীগ বিদ্রোহী ১৩, বিএনপি’র ১৬, বিদ্রোহী-১, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৮, জাপা ২, মশাল ২, স্বতন্ত্র ১৮। সাধারণ আসনে মেম্বার প্রার্থী ৫৯৪, সংরক্ষিত মহিলা ১৩৯, ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ১৭৮ জন। বিএনপি’র ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। একই সাথে ভোটারদের মাঝেও উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আতংকে রয়েছে।
 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিকাংশ বিএনপি ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, মনোনয়ন পত্র দাখিল, যাছাই-বাছাই প্রত্যাহার ও প্রতীক বারাদ্ধের পর থেকে ১৬টি ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে মহল্লায় মহল্লায় ভোটারদেরকে তাদের সমর্থন করে ভোট দিতে বিভিন্ন ভাবে অস্ত্র নিয়ে দিনেও রাতে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। অস্ত্রের মহড়া দেখে বিএনপি ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিয়ে আতংকে রয়েছে।
এ নিয়ে ভোটের আমেজ অনেকেই হারিয়ে ফেলেছে। ভোটাররাও কেন্দ্রে যাবে কি না এ নিয়ে আতংকে রয়েছে। থানার ওসি’র কাছে আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ার ব্যাপারটি অভিযোগ করলেও কোন কাজে আসেনি। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে আমান উল্যাহপুর ইউনিয়নে ফিরোজ আহম্মদ মিলন চৌধূরী (ধানের শীষ), মোঃ আরিফুর রহমান মাহমুদ (নৌকা প্রতীক), মোঃ আলমগীর হোসেন (স্বতন্ত্র মোটর সাইকেল), মোঃ নুর রহমান (স্বতন্ত্র)। গোপালপুর ইউনিয়নে মোঃ কামরুল হুদা (নৌকা), আরিফুর রহমান (আ’লীগ বিদ্রোহী), সাইফুল ইসলাম লিটন (ধানের শীষ), মোঃ মোশাররফ হোসেন (স্বতন্ত্র), আবু সুফিয়ান (হাতপাখা)। জিরতলী ইউনিয়নে রফিকুল ইসলাম মিলন (নৌকা প্রতীক), ডিলা সেলিম (আ’লীগ বিদ্রোহী আনারস প্রতীক), এ.এস.এম সেলিম (ধানের শীষ)। আলাইয়াপুর ইউনিয়নে আনিছুর রহমান (নৌকা প্রতীক), মোরশেদ আলম ভূঁইয়া (আ’লীগ বিদ্রোহী), মীর জুমলা মিঠু (ধানের শীষ), আবদুল কুদ্দুস (হাতপাখা), লোকমান হোসেন (স্বতন্ত্র), আলাউদ্দিন (স্বতন্ত্র)। ছয়ানী ইউনিয়নে মোঃ মহিউদ্দিন (নৌকা), মোঃ হারুন (আ’লীগ বিদ্রোহী), জামাল উদ্দিন (ধানের শীষ), জসিম উদ্দিন (স্বতন্ত্র), বেলাল হোসেন (স্বতন্ত্র), পারুল আক্তার (স্বতন্ত্র), মোঃ সিরাজ (হাতপাখা)। রাজগঞ্জ ইউনিয়নে মোস্তাফিজুর রহামন চৌধুরী সেলিম (নৌকা), এইছ.আর.এম সাইফুল (আ’লীগ বিদ্রোহী), বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হারুনুর রশিদ (ধানের শীষ), মোজাম্মেল হক (জাপা), আবুল কাশেম (স্বতন্ত্র)। একলাশপুর ইউনিয়নে আলমগীর কবির ভূঁইয়া আলো (নৌকা), সাহেদুর রহমান দিপু (আ’লীগ বিদ্রোহী), মোঃ খলিলুর রহমান (ধানের শীষ)। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে মোঃ মোস্তফা কামাল (নৌকা), সাইদুর রহমান (ধানের শীষ), মহি উদ্দিন (হাতপাখা), জয়নাল আবদিন (মশাল)। মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়নে মোঃ শাহজাহান (নৌকা), মোজাম্মেল হোসেন (আ’লীগ বিদ্রোহী), মোস্তাফিজুর রহমান (ধানের শীষ), এম.এ মতিন (জাপা), খোরশেদ আলম (স্বতন্ত্র), মোঃ আজিজুল হক (স্বতন্ত্র)। নরেত্তমপুর ইউনিয়নে আমীর হোসেন (নৌকা), মোঃ হারুন (ধানের শীষ), মোঃ আলী হোসেন (বিএনপি বিদ্রোহী)। দূর্গাপুর ইউনিয়নে আবেদ সাইফুল কালাম (নৌকা), আবদুল ওহাব (ধানের শীষ), এম.এ জলিল চৌধূরী (স্বতন্ত্র), মফিজুর রহমান (মশাল)। কুতুবপুর ইউনিয়নে কামাল হোসেন (নৌকা), এ.কে.এম শাহাব উল্যাহ (আ’লীগ বিদ্রোহী), মোঃ শহিদ উল্যাহ (ধানের শীষ), মিজানুর রহমান (হাতপাখা), জাহাঙ্গীর আলম (স্বতন্ত্র)। রসুলপুর ইউনিয়নে নুরুল হোসেন (নৌকা), শরিফ উল্যাহ (আ’লীগ বিদ্রোহী), মোঃ নুরনবী চৌধূরী (ধানের শীষ), মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (হাতপাখা)। হাজিপুর ইউনিয়ন আবুল কালাম (নৌকা), আনোয়ার হোসেন (আ’লীগ বিদ্রোহী), মোঃ তরিক উল্যাহ জিন্নাহ (ধানের শীষ)। শরিফপুর ইউনিয়নে মোঃ আমিনুর রসুল (নৌকা), মোঃ হারুন অর রশিদ (আ’লীগ বিদ্রোহী), মোঃ ছালাউদ্দিন (ধানের শীষ), মোঃ কামাল উদ্দিন (হাতপাখা), নোমান সিদ্দিকি (স্বতন্ত্র), এ.কে.এম মমিন উল্যাহ (স্বতন্ত্র), মোঃ আবুল কাশেম (স্বতন্ত্র), আইয়্যুব নবী (স্বতন্ত্র)। কাদিরপুর ইউনিয়নে মোঃ ছালাউদ্দিন (নৌকা), জাবেদ উদ্দিন সুজন (আ’লীগ বিদ্রোহী), কাজী আবুল বাশার (ধানের শীষ), মোঃ মিজানুর রহামন (হাতপাখা), মোঃ নুর নবী (স্বতন্ত্র)।
এদিকে রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (এ.পি.পি) এডভোকেট সাইফুল ইসলাম হারুন বলেন, ভোট ডাকাতি, ব্যালট পেপার ছিনতাই, রাতে ব্যালেট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ঢুকানো কেন্দ্রে প্রতি পক্ষকে ভয় ভীতির মধ্যে যেতে বাধা দেওয়া এই শংকা কাটাতে পারে একমাত্র প্রশাসন আমলারা। প্রশাসন এবং আমলাদের কাছে আমার দাবী, বর্তমান সরকারের ভাব মূর্তি নষ্ট করার জন্য প্রশাসন বা আমলারা যেন এতে জড়িয়ে না পড়ে। তাহলে সুষ্ঠু পরিবেশে ইউনিয়নবাসী তাদের মনোনীত ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে সক্ষম হবে।
বর্তমান ও বিএনপি’র দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হারুনুর রশিদ, ছয়ানী ইউনিয়নের বর্তমান ও বিএনপি’র দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ জামাল উদ্দিন, জিরতলী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ডিলার সেলিম, আলাইয়াপুর ইউনিয়নের বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থী মীর জুমলা মিঠু, একলাশপুর ইউনিয়নের বর্তমান ও বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান, গোপালপুর ইউনিয়নের বিএনপি’র দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল ইসলাম লিটন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান জানান, উপজেলায় নির্বাচন চলাকালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে প্রতি কেন্দ্রে আমার এজেন্ট ও ইউনিয়নের ভোটারদের ভোট দিতে এলে তাদের নিরাপত্তা দিতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, র‌্যাব ও বিজিবি নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করলে অবশ্যই অধিকাংশ বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়া সুনিশ্চিত।
 
এর ব্যতিক্রম হলে অবশ্যই সকাল ১১টায় উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ভোট বর্জন করে পুনরায় নির্বাচন দাবীতে ভোটারদেরকে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। অপরদিকে আমান উল্যাহপুর ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুর রহমান মাহমুদ, একলাশপুর ইউনিয়নের আ’লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর কবির ভূঁইয়া আলো, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মোস্তফা কামাল, দূর্গাপুর ইউনিয়নের আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবেদ সাইফুল কালাম, কাদিরপুর ইউনিয়নের আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ ছালাউদ্দিন ও রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধূরী সেলিম  জানান, নির্বাচন চলাকালে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে প্রতি কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, র‌্যাব, বিজিবি ও পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়ন রাখতে দাবী করছে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে অবশ্যই আ’লীগের অধিকাংশ চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
                    
এদিকে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আনিচুজ্জামান জানান, আগামী ২৮ মে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি কেন্দ্রে এজেন্ট ও ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, আনসার রাখা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন চলাকালে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ টিম টহলে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোট চলাকালে কোন কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই, বাক্স ভাংচুর ও জাল ভোটের অভিযোগ পাওয়া গেলে স্ব স্ব কেন্দ্রের ফিজাইডিং কর্মকর্তা ভোট স্থগিত করে রিপোর্ট দেওয়ারও নির্দেশ রয়েছে।
২২ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে