বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৬:০৫:১৯

সরদার বকুলকে ঠেকাতে আ.লীগ-বিএনপি একজোট

সরদার বকুলকে ঠেকাতে আ.লীগ-বিএনপি একজোট

নরসিংদী : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। প্রার্থিতা ঘোষণার পরই বিএনপির বড় একটি অংশের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সেই সঙ্গে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন তারা। এখনো মাঠে নামেননি দলের একাংশের নেতাকর্মীরা।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাঠ দখলে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সঙ্গে নিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের। সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের ধানের শীষকে রুখে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের নৌকাকে জেতাতে একজোট হয়ে কাজ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফলে খেসারত দিতে হচ্ছে ধানের শীষের প্রার্থী বকুলকে।

এরপরও নরসিংদী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ধানের শীষ প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ১/১১-এর সময়ে বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে বিএনপি থেকে ছিটকে পড়েন। সংস্কারপন্থী তকমা নিয়ে দলের বাইরে থাকায় এ আসনে বিএনপির হাল ধরেন লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিট নিয়ে নির্বাচন করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। সে সময়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের কাছে পরাজিত হলেও সম্মানজনক অবস্থানে ছিলেন জয়নুল।

সংস্কারপন্থী ও দীর্ঘদিন দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা বকুলকে নির্বাচনের দুই মাস আগে দলে অন্তর্ভুক্ত করে মনোনয়ন দেয়া হয়। এতে হতাশ হয়ে পড়েন দীর্ঘদিন দলের হাল ধরে রাখা বিএনপির কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল জয়নুল আবেদীন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। এতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তাদের অনুসারীরাও।

এরই মধ্যে দুই উপজেলার বিএনপির বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতা ও তাদের কয়েক হাজার কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ শুরু করেন। এদের মধ্যে মনোহরদীতে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন মাস্টার, কৃষক দলের সভাপতি ও চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, শুকুন্দী ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ও মনতলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিএনপি নেতা বাকিউল ইসলাম বাকি প্রমুখ।

একইভাবে বেলাব উপজেলার বেলাব ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেম্বার স্বপন মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর ইসলাম হানিফ ও বিএনপি নেতা আমানউল্লাহও আওয়ামী লীগে যোগ দেন। একই সঙ্গে নৌকাকে জেতাতে কাজ করছেন তারা।

আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া মনোহরদী উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমি ৫ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। আমাদের এই মুহূর্তে প্রধান কাজ হলো আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকা প্রতীকের বড় বিজয় নিশ্চিত করা।

এর আগে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে ছিল দ্বিধা-বিভক্তি। কিন্তু বকুল বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর পাল্টে যায় আওয়ামী লীগ। কারণ বকুল এমপি থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-নিপীড়ন করেছিলেন। পুরনো সেই অতীতের ভয়ে বকুলকে ঠেকাতে বিবেদ ভুলে নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ।

এদিকে, নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বিএনপির প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। গণসংযোগ করতে না পেরে নিজ বাড়িতে বসেই নির্বাচনের ছক কষছেন তিনি।

পাশাপাশি মনোহরদী-বেলাবরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছেন শান্তি, নিরাপদ ও বাসযোগ্য মনোহরদী-বেলাব গড়ার প্রতিশ্রুতি। চাচ্ছেন নৌকা মার্কায় ভোট।

জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, দুই-তিন জন ছাড়া সব নেতাকর্মী আমার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের হামলা, মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালাতে পারছে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে টের পাবেন আমার জনপ্রিয়তা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বকুলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজ এখানের মানুষের গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও শান্তিতে বসবাস করতে চায়। তাই এবারের নির্বাচনে সকলের আস্থা শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকে। সবাই নৌকায় ভোট দেবে এবার।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে