পাবনা: পাবনার সাঁথিয়ায় চাষিদের কয়েকটি পুকুর থেকে কোটি টাকার মাছ চুরি করার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্থানীয় সালিসি বৈঠকে অভিযুক্তরা মাছ চুরির বিষয়টি স্বীকার করলে তাদেরকে জরিমানা করা হয়। তবে বৈঠকের বিচারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা।
গত ৫ নভেম্বর উপজেলার নন্দনপুরের গ্রামের প্রধান আলী মুর্তজার সভাপতিত্বে রাঙামাটি মসজিদ ঘরে সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ২৭ অক্টোবর রাত ২ টার দিকে নজরুল নামের এক মাছের গাড়িচালক মাছ নিতে গেলে পাহারায় থাকা হাসমত আলীর কাছে আটক হন। পরে গাড়িচালক মাছ চুরি চক্রের রানা ও রবিউলসহ সবার নাম জানিয়ে দেন।
এলাকাবাসী জানান, পাবনা জেলার মৎস্য উৎপাদনে অন্যতম প্রধান উপজেলা সাঁথিয়া। উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নে রয়েছে মৎস্য চাষিদের কয়েক হাজার পুকুর। মাছের চাষকে ঘিরে তৈরি হয়েছে মাছ চুরি চক্র।
তারা দীর্ঘদিন ধরে অন্যের পুকুর থেকে মাছ চুরি করে। এতে লাভজনক ব্যবসা থেকে লোকসানে পড়তে হয় চাষিদের। মাছ চুরি ঠেকাতে পাহারা দিতে থাকেন মৎস্যচাষিরা।
এক পর্যায়ে গত ২৭ অক্টোবর রাত দুইটার দিকে মাছের গাড়িচালক নজরুল মাছ নিতে গেলে পাহারায় থাকা হাসমত আলীর কাছে আটক হন। পরে গাড়িচালক মাছ চুরি চক্রের রানা ও রবিউলসহ সবার নাম জানিয়ে দেন। ঘটনা ফাঁস হলে রওশন মাস্টারের ছেলে হাসমত আলী প্রধানদের নিকট বিচার চান।
নন্দনপুরের গ্রাম্য প্রধান আলী মুর্তজার সভাপতিত্বে রাঙামাটি মসজিদে সালিস হয়। সালিসে শাহীন হোসেন, আঃ আওয়াল, লিটন হোসেনসহ স্থানীয় প্রধানগণ ও মাছচাষিরা উপস্থিত ছিলেন।
সালিসে রাঙামাটি গ্রামের হাজী আঃ মালেকের ছেলে রানা আলী ও তার ভগ্নীপতি রবিউল ইসলাম নিজের পুকুরে মাচ চাষের আড়ালে অন্যের পুকুর থেকে মাছ চুরির কথা স্বীকার করেন।
তারা জাল দিয়ে মাছ চুরিতে নিজেদের জাল ও নির্ধারিত শ্রমিক, গাড়ি ব্যবহার করত। সালিসের দিন ৬২ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করে বলেও জানান। প্রধানরা রানাকে ৬০ হাজার ও সহযোগী দুই সাকিব ও নাছিমের ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
ভুক্তভোগী হাসমত বলেন, তিন পুকুর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ চুরি হয়েছে। একই গ্রামের নজরুলের ছেলে হুমায়নের ১০-১২ লাখ, আঃ রাজ্জাকের ছেলে সুরুজের ৭-৮ লাখ, আঃ মজিদের ছেলে তুহিনের ৫-৭ লাখ টাকার মাছ চুরি হয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় আসাদুজ্জামানসহ গ্রামের আরও কয়েকজনের পুকুরের মাছ চুরি করেছে চক্রটি। এতে চাষিদের মোট কোটি টাকার মাছ চুরি করেছে চক্রটি।
ভুক্তভোগী হাসমত বলেন, ‘মাছ চাষ করে আমার সংসার ভালো চলছিল। হঠাৎ ২০২১ সাল থেকে পুকুরে ছেড়ে দেওয়া মাছের সাথে বিক্রয়ের সময় মাছের মিল হচ্ছিল না। চোরেরা গভীর রাতে নিজেদের পুকুরে মাছ ধরতে এসে আমাদের পুকুরে জাল দিযে মাছ ধরতো।’
গ্রাম্যপ্রধান ও রাঙামাটি গ্রামের মসজিদের ইমাম আব্দুল আওয়ার জানান, সালিসে চোরেরা মাছ চুরির কথা স্বীকার করেন। তাদের ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে বাদী পক্ষ এ বিচারে সন্তেষ্ট না হওয়ায় পরবর্তিতে আবারও সালিস বসার কথা রয়েছে।
সালিসি বৈঠকের সভপতি আলী মুর্তজা জানান, স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষীর ভিত্তিতে চোর চক্রের জরিমানা করা হয়েছে। চোরের প্রধান রানাও চুরির কথা স্বীকার করেছেন।
অভিযুক্ত রানা ও রবিউলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে রানার বড় ভাই নুর মোহাম্মদ ফোন ধরে জানান, তারা কেউ এলাকায় নেই। সালিসি বৈঠকের পর থেকে দুজনই পলাতক রয়েছেন।