মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০১৬, ০৯:১৫:৩৪

পূরণ হচ্ছে না নিজামীর শেষ ইচ্ছা

পূরণ হচ্ছে না নিজামীর শেষ ইচ্ছা

পাবনা প্রতিনিধি : বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী।  কিন্তু তার শেষ ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না।  

মনমথপুর কবরস্থানেই তাকে সমাহিত করার অনুমতি দেয়া হলেও বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হবে না।  সেই স্থানে কবরের জায়গা না দিয়ে কিছুটা দূরে তার মামার কবরের পাশে তাকে শায়িত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।  সে অনুযায়ী জায়গাটি পরিষ্কারও করা হয়েছে।

১০ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মতিউর রহমান নিজামীর ভাতিজা আব্দুর রহিম খান গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, চাচা (নিজামী) এখানে এসে বলেছিলেন, মনমথপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে শায়িত হতে চান।  কিন্তু সেই স্থানে জায়গা না দিয়ে কিছুটা দূরে তার মামার কবরের পাশে শায়িত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, কবরস্থানসহ সম্ভাব্য সব জায়গাগুলোই দেখেছি।  নিজামীর বাবা-মায়ের কবরের পাশের জায়গাটি জঙ্গলাকীর্ণ।  এটি একদিনে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়।  তাই সেখানে দাফনের চিন্তা বাদ দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। মরদেহ আসার পর দাফনের সব কার্যক্রম শুরু করবো।

এদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করতে কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে তিনটি গাড়িতে করে পরিবারের ১৮ সদস্য কারাগারের মূল ফটকে এসে পৌঁছায়।  পরে কারাগারে প্রবেশ করেন তারা।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আছেন স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী, দুই ছেলে ড. খালিদ ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমিন, মেয়ে খাদিজা মহসীনা, বড় ছেলের স্ত্রী, দুই নাতি, নিজামীর চাচাতো ভাই, ভাইয়ের মেয়ে।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীর পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে ফোন দেয়।  

অবশ্য নিজামীর সঙ্গে দেখা করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল।  সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারকে ডাকা হয়েছে বলে জানান তাদের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।

এদিকে নিজামীও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলেন।  পরে আজ সন্ধ্যার পর তাদের কারাগারে ডাকা হয়।  

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টা ১মিনিটে কার্যকর করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রায় কার্যকরে আদেশ নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌছেছেন।

ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে জল্লাদ রাজু ও সহযোগীরা ফাঁসির মহড়াও সম্পন্ন করেছেন।

সাক্ষাতের পর ফাঁসি দেয়ার আগে জামায়াত নেতাকে গোসল করানো হবে।  এরপর কালিমা পড়ানো হবে। পরে জমটুপি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হবে নিজামীকে।  

এ সময় উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. সালাহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা, জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
 
এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিজামীকে একটি প্রতিনিধিদল জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না।  নিজামী এতে সাড়া দেননি।  এ দলে ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রিজনস) ইকবাল কবীর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির।

সূত্র জানায়, জল্লাদ রাজুর নেতৃত্বেই নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হতে পারে।  এর আগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা) ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করেছিলেন রাজু।  জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়ও সহযোগী ছিলেন এই রাজু।।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।

তিনি জানান, প্রাণভিক্ষার আবেদন না করায় যেকোনো সময় নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রী তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জেলকোড অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।  তবে দ্রুতই রায় কার্যকর করা হবে এবং ফাঁসি কার্যকর করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন।

জীবনের শেষ সময়টা কারাগারেই কাটালেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী।  কেন্দ্রীয় কারাগারের রজনীগন্ধ্যা সেলের ৮ নম্বর কক্ষে আছেন তিনি।  সেল থেকে নিজামীর ফাঁসির মঞ্চের দূরত্ব মাত্র ২০ গজ।

সূত্রটি জানায়, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় রায় পড়ে শোনানোর পর গলা শুকিয়ে যায় নিজামীর।  এরপর ওই রাতে কারারক্ষীদের কাছ থেকে ১৭ বার পানি চেয়ে পান করেন তিনি।

সূত্রে জানা যায়, মৃতুদণ্ডের রায় পড়ে শোনানোর পর গভীর রাত পর্যন্ত নিজামী সেলের মধ্যে পায়চারী করছিলেন।  পরে রাত ২টার দিকে ঘুমাতে যান তিনি। ভোরা রাতে উঠে আবার ফজরের নামাজ আদায় করেন তিনি।

কারাগার সূত্র জানায়, অন্য বন্দিদের সঙ্গে নিজামীকেও সকালের নাস্তা দেয়া হয়।  দুটি রুটি ও এক বাটি ভাঁজি দিলে কিছু ভাঁজি বাদে সব খেয়ে নেন।  তবে ডিম, চা খাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ নেই তার।  তার চায়ের অভ্যাস নেই বললেই চলে।

সূত্র জানায়, পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে চকবাজারের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারেই ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানো হবে নিজামীকে।

তবে মতিউর রহমান নিজামীর দুটিই চাওয়া ছিল।  এরই মধ্যে একটি পূরণ হয়েছে।  অন্যটি আর পূরণ হবে না।  দুটিই চাওয়ার মধ্যে একটি পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করা এবং অন্যটি তার বাবা-মায়ের পাশে তাকে সমাহিত করা।  

উল্লেখ্য, নিয়মানুযায়ী রায় পড়ে শোনানোর পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার সুযোগ থাকে।    

নিজামীর দল জামায়াতের পক্ষ থেকে এর আগেই দাবি করা হচ্ছে, নিজামী তার স্বজনদের জানিয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন না।

আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না তার।  তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে নিজামীকে ফাঁসির রশিতে ঝোলাতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না।

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁসির প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছেন কারা কর্মকর্তারা।  বৈঠকে ছিলেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল, কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেসার আলমসহ বেশ কয়েকজন কারা কর্মকর্তা।
১০ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে