রেজাউল করিম রেজা: একদিন চম্পার জীবনে নেমে এলো সীমাহীন কষ্টের আধাঁর । কোন এক শপিং মলে শপিং শেষ করে বের হওয়ার সময় সিঁড়ির তে পা ফোঁসকে পড়ে যায় তাতে তার এক পা উল্টে যায়। তাকে নেয়া হয় যশোর জেলার একটি হাসপাতালে সেখানে তার চিকিৎসা চলে দীর্ঘ ৬ মাস। কিন্তু কোন ভাল ফল আসেনি। তার পায়ের শেষ জয়েন্ট থেকে কোটিটা খুলে যাওয়ায় সে আর পায়ে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা। সিরাজ তার পিছনে ৬ মাস দেখা শোনা করতে গিয়ে তার প্রান কোম্পানির ছোট চাকরীটাও হারিয়েছে আর চম্পা হারিয়েছে তার জমানো টাকা আর নিজ পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি আপন মনোবল আর নিজের চাকরী। সব মিলিয়ে চম্পা এখন অসহায়। হাসপাতালে থাকা কালীন সময় তার মা আর বড় ভাই একদিন খবর পেয়ে এসেছিল চম্পাকে দেখতে, কিন্তু চম্পার সাথে কোন কথা বলেনি এমন কি এক টাকা দিয়েও সাহায্য করে নি। এর পর আর কোন খবর নেয়নি কোনদিন। হাসপাতাল থেকে বাসায় আসে হুইল চেয়ার এ বসে। পথ চলার সঙ্গি এখন লাঠি। তাকে সাহায্য করার জন্য কেও আসত না খওয়া দাওয়া গোসল কাপড়টাও কেও ধুয়ে দিত না। তবুও আল্লাহার উপর ভরসা রেখে সে চুপ থাকতো । এই চুপ থাকা তাকে ক্ষমা করেনি তাকে রহম করেনি তার শ্বশুর বাড়ীর মানুষ। ভাবেনি মেয়েটির অসহায় জীবনের কথা। তাকে বাড়ী ছাড়া করার সব চেষ্টাই চালাচ্ছিল তারা।
একদিন দুপুরে বেড়াতে এলো চম্পার বড় জা । সাথে তার একটি ৩ বছরের একটি ছেলে। চম্পা সে সময় গোসল সেরে ঘরে চুল শুকচ্ছিল জা আসতেই সে আস্তে আস্তে লাঠিতে ভর করে জায় জা এর ঘরে গিয়ে দেখে তার ছেলে একা বসে খেলা করছে চম্পার ছোট বাচ্চা খুব পছন্দ। তাই আদর করতে মন আর মানল না। খালী ঘরেই সে প্রবেশ করলো আর কিছুটা সময় তার সাথে কাঁটালো। এরপর বাচ্চার মা আসলে তার সাথে কুশল বিনিময় করে চম্পা তার ঘরে চলে যায়। ঠিক আধ ঘণ্টা পর চিৎকারের শব্দে বাড়ীর সবাই আতঙ্কিত হয়ে যায়। হায় হায় আমার সব লুট হইয়া গেছে আমি শেষ ইত্যাদি। চিৎকার শুনে সবাই ছুতে গেলো বড় জা এর ঘরে সবার সাথে চম্পাও গেলো খুড়িয়ে খুড়িয়ে । যেতেই শুনে তার জা এর সব অলঙ্কার চুরি হয়েছে। আর সেটা নাকি চম্পা নিয়েছে। এই কথা শুনে চম্পার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরল তার হাত পা কাঁপতে লাগলো ভয়ে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে আপা আমি আল্লাহর কসম করে বলছি আমি নেইনি। আপনি ইচ্ছা করলে আমার ঘর তালাশ করতে পারেন। তালাশ করে কি হবে তুমি কি আর ঘরে রাখছ। পার করে দিছ। চুরি করে কি আর ঘরে রাখছ? একটি পঙ্গু মেয়ে তাকে এমন অপবাদ দিলো । প্রতিবাদের ভাষা নেই সঙ্গী তার চখের জল অসহায় তার দুটি গাল সান্তনার পরশে গড়িয়ে পরছে তার কষ্টে ভরা বুকে। মুছারও কেও নাই। মনে পরছে বার বার তার মায়ের কথা । তার স্বামীও অপারগ প্রতিবাদ করতে পারছেনা। কারন সে এখন বেকার মা ভাইএয়ে সংসারের বোঝা। এই অপবাধ সইতে না পেরে চম্পা কয়েক বার আত্মহত্তার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনি। স্বামীর নিরবতাও তাকে বিষিয়ে তুলেছে। বাড়ীর কোন মানুষ তার সাথে কথা বলে না। এমন বিরুপ অবস্থায় তার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। একদিন খুব ভোরে কাউকে না বলে মনে অনেক খোব অভিমান নিয়ে চম্পা পারি দেয় অজানার পথে কি করবে সে তার এই অসহায় জীবন নিয়ে। তার ভাই দের কাছে যাবে সে পথ ও সে হারিয়ে ফেলেছে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে সিরাজুল ইসলাম কে ইসলাম গ্রহন করে বিয়ে করাতে। তবুও জীবন বাঁচাতে সে চলে যায় ফারিদপুর কামারখালী তার এক দুধ মা"য়ের কাছে। সেখনে থেকে সে চেয়েছে নিজে কিছু করতে যাতে কারও উপর সে বোঝা নাহয় আর দুধ মা কে বলেছে তার স্বামীকে যেন না জানায় যে সে এখানে আছে।কিছু দিন না যেতেই চম্পার স্বামী এসে হাজির তার দুধ মা বাসায়। চম্পা তো দেখে অবাক, কি করে জানলো যে চম্পা এখানে, অনেক কথার পর জানতে পারে দুধ মা তাকে খবর দিয়েছে। দুধ মা চেয়েছে দুজনের মাঝে সু সম্পর্ক তৈরি করা । কিন্তু তার স্বামী বেকার আর যে অপবাদ নিয়া চম্পা শ্বশুর বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই বাড়ীতে কোন মুখ নিয়া যাবে। তাই চম্পা সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আর তার স্বামীকে চলে যেতে বলে এই বলে যে যদি নিজে চাকরী করে আলাদা বাসা নিতে পারো আমাকে নিতে আসবে তখন আমি যাবো ।
এর ২ দিন পর চম্পা তার ঢাকা মিরপুর বসবাস রত এক দূর সম্পর্কের ভাগ্নির বাসায়। সেখানেও সে টিকতে পারেনি সাত দিন। তার পর সে চলে আসে তার একদম ছোট বেলের বান্ধবি তেজগাঁও ঢাকা । সেখানে তার বান্ধবির আস্রয়ে সে খুজে পায় তার নতুন বেঁচে থাকার অবলম্বন। তার বান্ধবি তার নিজ খরচে আর নিজ জিম্মায় চম্পার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় সাবলেট এক টিন সেট বাসাতে। তার বান্ধবী একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা । সামান্য বেতন আর স্বামীর প্রাইভেট কোম্পানির চাকরীর বেতন সব মিলিয়ে চলছিল তার জীবন। এর মাঝেও চম্পাকে কিনে দেয় একটি সেলাই হাত মেশিন কারণ সে হাতের কাজ খুব ভালো করতে পারতো। সুস্থ থাকতে বিয়ের আগে সে জেলখানাতে মহিলাদের সেলাই কাজ শেখাত। কিন্তু শুরুতে কার সাথে কারো ভালো পরিচয় না থাকায় তার কাজ পেটে কষ্ট হতো। পরে তার বান্ধবীর সাহায্যে তার স্কুলের গার্ডিয়ান ও শিক্ষিকাদের জামার কাজ পেতে শুরু করে কিছুটা নিজ খরচে থাকা আর ডাল ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা মাত্র। তার ওষুধের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তাকে হিমসিম খেতে হয় । এভাবে চলছে তার জীবন, এর মাঝে তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ হয়, প্রায় কথা হয় । এখনও সে বেকার চাকরী হয়নি, ভাইদের সংসারে বোঝা হয়ে আছে। কথা হয় মোবাইলে সিরাজের সাথে এর মাঝে সিরাজের মোবাইলে টাঁকা রিচার্জ করে দিত আবার হাত খরচের জন্য বিকাশ এ টাকা পাঠাতো। এই হোল নারী এতো কিছুর পরও নিজের সু সময়ে স্বামীকে নিয়ে সপ্ন দেখে নিজের কামাই দিয়ে চায় স্বামীকে নিয়ে সংসার করতে একটু ভালোবাসার নরম কথায় ভুলে যায় জীবনের সব দুঃখ কষ্ট, অধরে ফোটে সুখের হাসি যেন স্বর্গ সে আর চায় না এখনেই পেয়েছে সব। নিজের এই ভাঙ্গা কোমর নিয়েও চম্পা সারাদিন সেলাই কাজ করে আর ভাবে এই কাজটা শেষ করে সিরাজের সাথে কথা বলবো, কথা বলার জন্য মন আনচান করতে থাকতো। এই বুঝি সিরাজ ফোন করলো । তবুও সিরাজ তাকে ফোন করতনা । সব কাজ সেরে একটু অবসরে চম্পা সিরাজকে ফোন করে বলত কেমন আছ তুমি সিরাজ বলত ভালনা, ফোন করনি কেন, একটি ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু কখন বলেনি চম্পা তুমি কেমন আছ, তুমার শরীর টা ভালো আছে, কি ভাবে চলছে তুমার জীবন ইত্যাদি ইত্যাদি ,শুধু জানতে চেয়েছে কিছু টাকা পাঠাইতে পারবা, হাতটা খালী। চম্পা তখন বলে ঠিক আছে। এ ভাবে চলছিল চম্পার জীবন কিছুটা আশা কিছুটা নতুন জীবন শুরু করার আকাঙ্খা, যখনি চম্পার আশার নিভে যাওয়া বাতি নিভু নিভু জ্বলতে শুরু করেছে ঠিক তখনি চম্পার কাঁচের পৃথিবী ভেঙ্গে গেলো ,আঁধার জীবনে আলোর আশা নিভে গেলো চিরতরে, তার চাওয়া পাওয়ার জীবন অর্থহীন হয়ে গেলো যখন শুনল সিরাজ আবার বিয়ে করেছে। বুক ভাঙ্গার শব্দ কেউ শুনেনি, শুনেনি তার কান্নার আহাজারি, শুধু দেখেছে বুকের মাঝে জমিয়ে রাখা বরফ দুঃখের আগুনের তাপে দুচোখ বেয়ে ঝর্না ধারা হয়ে বয়ে যাওয়া চোখের জল । শুধু একটাই কথা আল্লাহ্ তুমি কেন আমাকে এতো কষ্ট দিলে আমার অপরাধ টা কি? তোমাকে না দেখে বিশ্বাস করে আমি ইসলাম গ্রহন করেছি, তোমার শেষ নবীকে ভালবেসেছি । তবুও কেন আমি এতো কষ্ট পেলাম আমি একা হলাম, মা , মাগো তুমি কি করে আমাকে পর করত্তে পারলে, তুমি আমায় পেটে ধরেছ তুমি কি করে পারলে। শুধু ধর্ম ছাড়াতে ছাড়তে হলো আপন মা ভাই রক্তের সম্পর্ক, হিন্দু ছিলাম আর ভালোবেসে বিয়ে করেছি বলে শ্বশুর বাড়ীতে গ্রহন যোগ্যতা পাইনি, শ্বশুর বাড়ীর মানুষের কষ্ট ছিল সিরাজ কে বিয়ে করিয়ে অনেক টাকা আর আসবার পত্র যৌতুক হিসাবে পেত, কিন্তু সেই আশায় ভাটা পরেছে চম্পা কে বিয়ে করে। তাছাড়া চম্পা হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছে বলে তার ভাইদের সব সম্পদ থেকে তাকে ত্যাজ্য করছে। সে এখন পৃথিবীতে একা। সঙ্গী তার একমাত্র সেলাই মেশিন, ভরসা তার হাতের জানা দর্জি কাজ। বর্তমানে চম্পা চায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে চায় সমাজকে দেখিয়ে দিতে যে নারীও পারে সমাজে অবদান রাখতে, নিজে কে প্রতিষ্ঠা করতে । কিন্তু তার জীবন সুন্দর করতে তার লাগবে একটা বড় অপারেশন আর লাগবে ১০-১৫ লক্ষ টাকা । চম্পাও চায় স্বাভাবিক জীবন, স্বামী-সংসার-সন্তান। কিন্তু সেই স্বপ্ন আবারও ঝোরে যাবে যদি না অপারেশন করা যায়।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আপনারা যারা এই গল্পটি পড়েছেন এটা আসলে কোন গল্প নয়, এটি একটি সত্যি বাস্তব আর চলমান ঘটনা। একটি নারী জীবন সাজাতে শুধু আমরাই পারি সহযোগিতার হাত বাড়াতে। কবির ভাষায় - ওগো নারী শ্রেষ্ঠ তুমি অবনীর গোলাপে গঠিত যেন ভিতর বাহির, মাঝে মাঝে সবিস্ময়ে তাই মনে হয় তুমিতো গোলাপ ছাড়া অন্য কিছুই নয়' । আপনাদের সাহায্যে হতে পারে একটি গোলাপের বেঁচে থাকার কাণ্ড। যদি কারো দয়া হয় সাহায্য পাঠাতে পারেন সরাসরি চম্পার নিজ নামের ব্যাংক হিসাব নং A/c no- 227 151 7078. Dutch Bangla Bank ltd. branch- Tejgaon. Dhaka. চম্পার সাথে কথা বলতে চাইলে তার মোবাইল নং- 01835601145.
২২ আগস্ট ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস